গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে প্রায় ৫ একর জায়গাজুড়ে দৃষ্টিনন্দন ভাওয়াল রাজবাড়ী (Bhawal Rajbari) ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭৮ সালে এটি জেলা পরিষদ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বর্তমানে এটি গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভাওয়াল রাজবাড়ী ঘিরে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ও রোমাঞ্চকর ঘটনা। এর মধ্যে ভাওয়াল সন্ন্যাসী রাজা রমেন্দ্র নারায়ণের কথিত মৃত্যুর ১২ বছর পর পুনঃআবির্ভাব এবং সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিখ্যাত "ভাওয়ালের সন্ন্যাসী মামলা" বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ ঐতিহাসিক কাহিনিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তম কুমার অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র “সন্ন্যাসী রাজা”, যা আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে।
রাজবাড়ীর স্থাপত্য ও সৌন্দর্য
ভাওয়াল রাজবাড়ীর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন জমিদার লোকনারায়ণ রায় এবং তা সমাপ্ত করেন রাজা কালিনারায়ণ রায়। রাজবাড়ীর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন রাজকুমার রমেন্দ্র নারায়ণ ও তার দুই ভাই। প্রাসাদটির প্রবেশপথে নজর কাড়ে কারুকার্যখচিত গেট এবং সারা বছর ফুলে ভরা নাগলিঙ্গম গাছ। ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা মেলে প্রশস্ত বারান্দা, হলঘর, এবং নানা স্থাপত্যশৈলীর মনোমুগ্ধকর ভবন।
এই রাজবাড়ীতে রয়েছে ৩৬৫টি কক্ষ, যার প্রতিটিই প্রাসাদের বিশালত্ব ও জমকালো ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। এখানে রয়েছে রাজ বিলাস, পুরান বাড়ি, নাট মন্দির, হাওয়া মহল, পদ্ম নাভির মতো ভিন্ন ভিন্ন নামের স্থাপনা। প্রাসাদের পশ্চিম পাশে বিশাল দীঘি এবং সামনের বিস্তৃত মাঠ এ স্থানটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
যাতায়াত নির্দেশিকা
ভাওয়াল রাজবাড়ী যেতে দেশের যেকোনো স্থান থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পৌঁছাতে হবে। ঢাকার যাত্রীরা বাস বা নিজস্ব গাড়িতে সহজেই সেখানে পৌঁছাতে পারেন। চৌরাস্তা থেকে ডান দিকে শিবপুর মোড় ধরে জয়দেবপুর-রাজবাড়ী সড়ক ধরে পূর্ব দিকে এগোলেই রাজবাড়ীতে পৌঁছানো যাবে। এছাড়া, সিএনজিচালিত যানবাহন বা রিকশায় সহজেই ভাওয়াল রাজবাড়ী যাওয়া যায়। ট্রেনে ভ্রমণ করলে জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে রিকশায় রাজবাড়ীতে পৌঁছানো সম্ভব।
থাকার ব্যবস্থা
ভাওয়াল রাজবাড়ী একদিনে ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাকায় ফিরে আসা যায়। তবে প্রয়োজন হলে রাত্রি যাপনের জন্য আশপাশের রিসোর্ট যেমন ছুটি, সারাহ, নক্ষত্র বাড়ি, গ্রিন ভিউ রিসোর্ট, সোহাগ পল্লী, স্প্রিং ভ্যালী, কিংবা জল ও জঙ্গলের কাব্য বেছে নিতে পারেন।
আশপাশের দর্শনীয় স্থান
ভাওয়াল রাজবাড়ী থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ভাওয়াল রাজশ্মশানেশ্বরী, যেখানে ভাওয়াল রাজপরিবারের সদস্যদের শবদাহ করা হতো। সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন কাছের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, নুহাশ পল্লী, কিংবা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে।
ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ী এবং এর আশপাশের স্থানগুলোতে ভ্রমণ আপনাকে ইতিহাস ও প্রকৃতির অপরূপ মেলবন্ধনে নিয়ে যাবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!