নীলাচল, বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে, টাইগার পাড়ার পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় ২০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এক স্বর্গীয় স্থান। আকাশ, পাহাড় আর মেঘের মিতালীতে গড়ে ওঠা এই জায়গা পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখে। সকালে মেঘের ভেলা আর বিকেলের সোনালি সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখতে নীলাচলই যেন সেরা গন্তব্য। এখান থেকে পুরো বান্দরবান শহর তো দেখা যায়ই, মেঘমুক্ত দিনে দূরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হাতছানিও দেখা মেলে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা আর চারপাশের সবুজের সমারোহ পথ চলার আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।
বর্ষা, শরৎ কিংবা হেমন্ত—যে ঋতুই হোক না কেন, নীলাচলে মেঘ যেন হাতের নাগালেই খেলা করে। নীলাচলের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রকৃতির নানা রূপ উপভোগ করা যায়, যা প্রতিবার নতুন এক অভিজ্ঞতা দেয়।
পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা
নীলাচলে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য কিছু কটেজ ও রিসোর্ট রয়েছে। সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দর্শনার্থীরা থাকতে পারেন। তবে যারা রিসোর্টে রাত কাটাতে চান, তাদের জন্য রাতযাপনের সুযোগ থাকে। মেঘের রাজ্য দেখতে চাইলে খুব সকালেই রওনা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
নীলাচল যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে বান্দরবান যেতে পারেন। শ্যামলি, সৌদিয়া, এস. আলম, ইউনিক, সেন্ট মার্টিন পরিবহন বা হানিফের নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা, আর এসি বাসের ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা। রাত ৯-১০টার মধ্যে ঢাকা থেকে রওনা দিলে সকাল ৭টার মধ্যে বান্দরবান পৌঁছানো যাবে। এছাড়া ট্রেন বা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়।
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকায় বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে নীলাচল যেতে সিএনজি, চাঁদের গাড়ি বা জীপ ভাড়া পাওয়া যায়। অবস্থান ও সময় অনুযায়ী সিএনজির ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা, জীপ ৮০০-১২০০ টাকা, আর চাঁদের গাড়ি ১০০০-২০০০ টাকা। ভাড়া নেয়ার আগে অবশ্যই দরদাম করে নেবেন!
কোথায় থাকবেন
নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে থাকতে চাইলে তিনটি কটেজের মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারেন। প্রতিটি কটেজে দুটি রুম থাকে, প্রতি রুমের ভাড়া ৩০০০ টাকা। আগে থেকেই বুকিং দিলে ঝামেলা এড়ানো যাবে।
আর বান্দরবান শহর কাছেই হওয়ায়, চাইলে শহরের হোটেল ও রিসোর্টেও থাকতে পারেন:
- হোটেল হিল ভিউ: ভাড়া ১২০০-২৫০০ টাকা
- হোটেল হিলটন: ভাড়া ১২০০-৩০০০ টাকা
- হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫ মিনিট হাঁটা, ভাড়া ১০০০-৩০০০ টাকা
- রিভার ভিউ: সাঙ্গু নদীর পাশে, ভাড়া ১০০০-২০০০ টাকা
- পর্যটন মোটেল: শহর থেকে ৪ কিমি দূরে মেঘলায়, ভাড়া ১২০০-২৫০০ টাকা
বিশেষ নোট: সিজন (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) বা ছুটির দিনে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকায় হোটেল ভাড়া বাড়তে পারে। তাই আগেভাগে রুম বুক করা বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া ৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে আরও অনেক রিসোর্ট ও রেস্টহাউজ সহজেই পাওয়া যায়।
খাবারের ব্যবস্থা
নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে থাকলে কর্তৃপক্ষ খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। তবে নীলাচলে ভালো রেস্টুরেন্টের সংখ্যা কম, শুধু ফরেস্ট হিল নামে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাই চাইলে বান্দরবান শহর থেকে হালকা খাবার নিয়ে যেতে পারেন, বা নীলাচল ভ্রমণ শেষে শহরে ফিরে খেয়ে নিতে পারেন। বান্দরবান শহরের জনপ্রিয় কিছু রেস্টুরেন্ট হলো:
- তাজিং ডং ক্যাফে
- মেঘদূত ক্যাফে
- ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট
- রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট
- রি সং সং
- কলাপাতা রেস্টুরেন্ট
শেষ কথা
নীলাচল যেন এক টুকরো স্বর্গ, যেখানে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে। মেঘের রাজ্য, পাহাড়ের আলিঙ্গন আর সূর্যাস্তের জাদুকরী দৃশ্য—সব মিলিয়ে নীলাচল হয়ে উঠেছে পাহাড়প্রেমীদের জন্য স্বপ্নের গন্তব্য। সঠিক পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই অপেক্ষা করছে এক আজীবন মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!