কেওক্রাডং বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত একটি চিত্তাকর্ষক পাহাড়। প্রায় ৩১৭২ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়কে একসময় দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মনে করা হলেও, বর্তমানে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কেওক্রাডং নামটি এসেছে স্থানীয় মারমা জনগোষ্ঠীর ভাষা থেকে, যার অর্থ “সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়”। দূর থেকে দেখলে এর চূড়া আকাশের সঙ্গে মিলিয়ে যায়, আর একবার চূড়ায় উঠলে পাহাড় আর মেঘের অপূর্ব সংমিশ্রণ আপনাকে মুগ্ধ করবেই!
কেওক্রাডং যাওয়ার পথ
আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, প্রথমে বান্দরবান শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বান্দরবানগামী বিভিন্ন পরিবহন চলাচল করে, যেমন:
- নন-এসি বাস: ৮০০-৯০০ টাকা
- এসি বাস: ১২০০-১৮০০ টাকা
- সময় লাগে: ৮-১০ ঘণ্টা
ট্রেনে গেলে প্রথমে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন রয়েছে, যেমন:
- পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিথা, মহানগর গোধূলি ইত্যাদি।
- ভাড়া: ৪০৫-১৩৯৮ টাকা (শ্রেণি অনুযায়ী)
- চাইলে বিমানেও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারবেন—
- বাসে (বদ্দারহাট থেকে): পূবালী/পূর্বাণী পরিবহন, জনপ্রতি ২২০ টাকা
- লোকাল বাস (ধামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে): ২০০-৩০০ টাকা
বান্দরবান থেকে কেওক্রাডং পৌঁছানোর ধাপ
১. বান্দরবান থেকে রুমা বাজার
- দূরত্ব: ৪৮ কিলোমিটার
- যাতায়াত ব্যবস্থা: লোকাল বাস বা চাঁদের গাড়ি/জীপ
- বাস ভাড়া: জনপ্রতি ১২০ টাকা
- সময় লাগে: ৩ ঘণ্টা
- চাঁদের গাড়ি (জীপ) ভাড়া: ৩০০০-৪০০০ টাকা (১০-১৫ জন বহনক্ষম)
রুমা বাজার পৌঁছানোর পর প্রথমেই গাইড ভাড়া করা বাধ্যতামূলক। গাইড সমিতির রেজিস্টার্ড গাইড ঠিক করতে হবে, এবং তার থাকা-খাওয়ার খরচও আপনাকে বহন করতে হবে।
👉 গুরুত্বপূর্ণ: রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে আপনাকে যেতে দেওয়া হবে না। বিকেল ৪টার পর বগালেক যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না, তাই সময় মতো পৌঁছাতে হবে।
২. রুমা বাজার থেকে বগালেক
- দূরত্ব: ১৭ কিলোমিটার
- যাতায়াত ব্যবস্থা:
- ল্যান্ডক্রুজার জীপ (৮-১৫ জন বহনক্ষম)
- লোকাল চাঁদের গাড়ি (সকাল ৮টা- বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি)
- ভাড়া:
- ল্যান্ডক্রুজার জীপ: ১৮০০ টাকা
- চাঁদের গাড়ি: ২০০০ টাকা
- লোকাল চাঁদের গাড়ি: জনপ্রতি ১০০ টাকা
👉 গুরুত্বপূর্ণ: বগালেক পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। বেশিরভাগ পর্যটক রাতে বগালেক থাকেন এবং পরদিন সকালে কেওক্রাডংের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
৩. বগালেক থেকে কেওক্রাডং
- দূরত্ব: ৪-৫ ঘণ্টার হাঁটা পথ (ট্রেকিং)
- পুরো পথই পায়ে হেঁটে যেতে হবে
- বেশ কিছু খাড়া পাহাড় পার হতে হয়
👉 ভালো হয় যদি কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় এক রাত থাকা যায়, কারণ এখান থেকে সুন্দর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।
কেওক্রাডং যাওয়ার গাইড খরচ
যাত্রার ধরণ | খরচ (টাকা) |
---|---|
গাড়িতে যাওয়া ও আসা – ১ দিন | ১০০০ |
গাড়িতে যাওয়া ও আসা – ২ দিন | ১৬০০ |
গাড়িতে বগালেক, তারপর ট্রেকিং – ২ দিন | ২০০০ |
গাড়িতে বগালেক, তারপর ট্রেকিং – ৩ দিন | ২৬০০ |
কেওক্রাডং থাকা ও খাওয়া
🏡 কোথায় থাকবেন?
কেওক্রাডংয়ের চূড়ার কাছেই কিছু আদিবাসী কটেজ রয়েছে, যেখানে থাকতে পারবেন।
- কটেজ ভাড়া: ১০০-১৫০ টাকা (জনপ্রতি)
- এক রুমে ৫-৬ জন থাকতে পারবেন
🍽️ খাবারের ব্যবস্থা
খাবার আদিবাসী ঘরে রান্না করা হয়। সাধারণত ১০০-২০০ টাকার প্যাকেজে খাবার পাওয়া যায়, যেখানে থাকে—
✔️ ভাত
✔️ ডিম
✔️ আলুভর্তা
✔️ পাহাড়ি মুরগি
👉 খাবারের জন্য আগে থেকে বলে রাখা ভালো, যেন ঠিকমতো খাবার মেলে।
বগালেক থাকা ও খাওয়া
🏡 কটেজ ভাড়া: ১০০-২০০ টাকা (জনপ্রতি)
🍽️ খাবার খরচ: কেওক্রাডংয়ের মতোই
👉 কাপল বা মহিলা পর্যটকদের জন্য আলাদা কটেজের ব্যবস্থা করা যায়।
কেওক্রাডং ভ্রমণের টিপস
✔️ ভালো গ্রিপের ট্রেকিং জুতা ব্যবহার করুন
✔️ ব্যাগপ্যাক যত হালকা সম্ভব রাখুন
✔️ বগালেক ও কেওক্রাডংয়ে বিদ্যুৎ নেই, তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন
✔️ পর্যাপ্ত পানি রাখুন, প্রয়োজনে ঝিরি থেকে বোতল ভরে নিতে পারেন
✔️ স্যালাইন বা গ্লুকোজ সঙ্গে নিন
✔️ টেলিটক ও রবির নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়
✔️ বগালেকের গভীর পানিতে সাবধানে গোসল করুন
✔️ আদিবাসী সংস্কৃতির প্রতি সম্মান বজায় রাখুন
✔️ বান্দরবান থেকে বগালেক রাস্তা পাহাড়ি ও আঁকাবাঁকা, সাবধানে চলাচল করুন
✔️ সব জায়গায় আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!