চর কুকরি মুকরি

চর কুকরি মুকরি (Char Kukri Mukri) ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এক সময় এই চরে প্রচুর কুকুর ও ইঁদুর (যাকে স্থানীয়ভাবে মেকুর বলা হয়) পাওয়া যেত, এই কারণেই এটি চর কুকরি মুকরি নামে স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে উঠেছে। ১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার একর জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের বনায়ন শুরু হয়। চর কুকরি মুকরির বনভূমিতে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, কেওড়া, নারিকেল, বাঁশ ও বেত গাছ রয়েছে। বর্তমানে চর কুকরি মুকরিতে বনভূমির পরিমাণ ৮৫৬৫ হেক্টর, যার মধ্যে ২১৭ হেক্টর জমি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং বসতি ও কৃষি আবাদের জন্য প্রায় ৪৮১০ হেক্টর জমি রয়েছে। মাছ ধরা ও কৃষিকাজ এখানকার মানুষের প্রধান পেশা।

চর কুকরি মুকরির অভয়ারণ্যে চিত্রা হরিণ, বানর, শিয়াল, উদবিড়াল, বন্য মহিষ-গরু, বন মোরগ, বন-বিড়াল প্রভৃতি প্রাণী দেখা যায়। এছাড়াও বক, শঙ্খচিল, মথুরা, বন মোরগ, কাঠময়ূর, কোয়েল ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ রয়েছে। শীতকালে এই চরে বিপুল সংখ্যক অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এছাড়া চর কুকরি মুকরির সমুদ্র সৈকত নির্জন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এর বনভূমিতে প্রায় ৯ কোটি জীবন্ত গাছ রয়েছে। চর কুকরি মুকরি বুক চিরে বয়ে যাওয়া ভাড়ানি খাল মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। চরের বালিয়াড়ির ধার দিয়ে ঢাল চর অতিক্রম করে সামনে এগোলেই বঙ্গোপসাগর। এখানেও কক্সবাজার বা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের মতো আবহ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা এই জায়গাটিকে বালুর ধুম নামে চেনে। চর কুকরি মুকরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

চর কুকরি মুকরি যাওয়ার সময়

শীতকালে চর কুকরি মুকরির প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ সময় ক্যাম্পিং করার জন্য উপযুক্ত। বর্ষায় চরের বেশিরভাগ অংশ ডুবে থাকে, তাই বর্ষাকালে এখানে ভ্রমণ না করাই ভালো। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস চর কুকরি মুকরি ভ্রমণের সবচেয়ে আদর্শ সময়।

যাওয়ার উপায়

চর কুকরি মুকরিতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় নদীপথ। ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলাগামী লঞ্চে চড়ে ঘোষের হাট লঞ্চ টার্মিনালে নামতে হবে। সেখান থেকে লেগুনা ভাড়া করে চর কচ্ছপিয়া ঘাট যাওয়া যায়। অন্যপথে, ঘোষের হাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চরফ্যাশন আইচা হয়ে চর কচ্ছপিয়া ঘাট আসা যায়। ঘোষের হাট থেকে সরাসরি লেগুনায় চর কচ্ছপিয়া যাওয়াই ভালো।

ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রিন্স অফ রাসেল-৪, কর্ণফুলী-৪, নিউ সাব্বির ২ ও ৩ লঞ্চে চড়ে ভোলার ঘোষের হাট লঞ্চ টার্মিনালে নামতে হবে। ডেকের ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা। ঘাট থেকে মোটরসাইকেল বা টেম্পোতে চরফ্যাশন সদরে এসে সেখান থেকে বাস বা মোটরসাইকেলে দক্ষিণ আইচা যেতে হবে। দক্ষিণ আইচা থেকে টেম্পো বা মোটরসাইকেলে চর কচ্ছপিয়া যাওয়া যায়। চর কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলারে চর কুকরি মুকরি পৌঁছানো যায়।

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে ঘোষের হাট লঞ্চ টার্মিনালে নেমে লেগুনায় চড়ে চর কচ্ছপিয়া ঘাটে পৌঁছাতে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগে। লেগুনার ভাড়া জনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, রিজার্ভ নিলে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। চর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে লোকাল ট্রলারে ৫৫ টাকা ভাড়ায় তেতুলিয়া নদী পার হয়ে চর কুকরি মুকরি বাজারে পৌঁছানো যায়। প্রতিদিন সকাল ৯টা ও দুপুর ১২টায় একটি করে লোকাল ট্রলার চর কুকরি মুকরির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রলার রিজার্ভ করলে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হবে।

মনে রাখুন

ঢাকা থেকে লঞ্চ বিকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে ছেড়ে যায় এবং ঘোষের হাট থেকে বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ছাড়ে। লঞ্চের রুট প্রায়শই পরিবর্তন হয়, তাই যাত্রার আগে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিন।

কোথায় থাকবেন

চর কুকরি মুকরিতে ক্যাম্পিং করা যায়। এছাড়া বন বিভাগ, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে রাত্রিযাপন করা যায়। রেস্ট হাউসে থাকতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করুন। চর কুকরি মুকরি রেস্ট হাউজের যোগাযোগ নম্বর: ০১৭৩৯ ৯০৮০১৩।

কোথায় খাবেন

বন বিভাগ, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

চর কুকরি মুকরি এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
208.35 কিমি
ভোলা থেকে
81.75 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
সোনারচর
জ্যাকব টাওয়ার
নিঝুম দ্বীপ
মনপুরা দ্বীপ
তালুকদার বাড়ী

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন