খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের একটি দুর্গম পাহাড়ি পথ স্থানীয়দের কাছে মায়ুং কপাল বা হাতিমুড়া (Hatimura) নামে পরিচিত। তবে এলাকাবাসীর কাছে এটি হাতিমাথা নামে বেশি জনপ্রিয়, যার চাকমা নাম ‘এদো সিরে মোন’। অনেকে একে স্বর্গের সিঁড়ি বলেও চেনেন। এই পথ ধরে ১৫টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। তাদের যাতায়াত সহজ করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ৩০৮ ফুট লম্বা একটি লোহার সিঁড়ি নির্মাণ করেছে।
হাতিমাথা পাহাড়ের চূড়া থেকে খাগড়াছড়ি শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। চারপাশের সবুজে মোড়ানো পাহাড়, মেঘের খেলা এবং আদিবাসী সংস্কৃতির বৈচিত্র্য পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলেছে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি
ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যেতে পারেন শান্তি, হানিফ, এস আলম, শ্যামলী, ইকোনো ও ঈগল পরিবহনের এসি/নন-এসি বাসে।
- নন-এসি বাস ভাড়া: ৭৫০-৮৫০ টাকা
- এসি বাস ভাড়া: ১০০০-১৬০০ টাকা
চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি
চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে বি আর টি সি ও শান্তি পরিবহনের বাস সরাসরি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
- নন-এসি বাস ভাড়া: ১৮০-২৫০ টাকা
- সময়সীমা: প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা
খাগড়াছড়ি থেকে হাতিমাথা পাহাড়
খাগড়াছড়ি সদর থেকে পানছড়ি যাওয়ার পথে জামতলী যাত্রী ছাউনির সামনে নামতে হবে। এরপর বাম দিকের রাস্তা ধরে চেঙ্গী নদী পার হয়ে পল্টনজয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে যেতে হবে।
প্রথমবার গেলে একজন গাইড নিয়ে নেওয়া ভালো, কারণ রাস্তা সহজে বিভ্রান্ত করতে পারে। কিছুটা পথ ট্রেকিং করে বগড়া পাড়া বা লারমা পাড়া, তারপর কাপতলা এলাকায় পৌঁছাতে হবে। এরপর নিচু পথ ধরে একটু এগোলেই হাতিমাথা পাহাড় দেখতে পাওয়া যাবে। জামতলী যাত্রী ছাউনি থেকে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হয়।
কোথায় থাকবেন?
খাগড়াছড়ি শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনি ৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম বুক করতে পারবেন।
ভালো মানের কিছু হোটেল:
- পর্যটন মোটেল
- এসি রুম: ২১০০ টাকা
- নন-এসি রুম: ১৩০০ টাকা
- যোগাযোগ: ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
- হোটেল গাইরিং
- ভাড়া: ১০০০-৩০০০ টাকা
- যোগাযোগ: ০৩৭১-৬১০৪১, ০১৮১৫-১৬৩১৭৩
- অরণ্য বিলাস
- টুইন বেড এসি: ২৫০০ টাকা
- সিঙ্গেল বেড এসি: ১৫০০ টাকা
- যোগাযোগ: ০১৮৩৮-৪৯৭২৫৭
- গিরি থেবার (Cantonment Area)
- ভিআইপি এসি রুম: ৩০৫০ টাকা
- এসি ডাবল রুম: ২০৫০ টাকা
- যোগাযোগ: ০১৮৫৯-০২৫৬৯৪
কম খরচে থাকার ব্যবস্থা:
শাপলা চত্বরের আশেপাশে কিছু বোর্ডিং হোটেল আছে, যেখানে ৩০০-৪০০ টাকায় থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর ও বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে স্থানীয় পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে পানথাই পাড়ার ‘সিস্টেম রেস্তোরা’-তে যেতে পারেন। এখানে পাওয়া যায়:
✅ কফি
✅ হাঁসের কালাভুনা
✅ বাঁশকুড়ুল
✅ ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবার
ভ্রমণের জন্য কিছু পরামর্শ:
✔️ প্রথমবার গেলে একজন গাইড নিয়ে নিন।
✔️ প্রায় দুই ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হবে, তাই খাবার ও পানি সাথে রাখুন।
✔️ স্থানীয়দের বিরক্ত করবেন না এবং পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন থাকুন।
✔️ ভালো গ্রিপের জুতা পরিধান করুন, কারণ ট্রেকিং পথে পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শেষ কথা
হাতিমাথা পাহাড় শুধু ট্রেকিংপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং যারা প্রকৃতি ও স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্যও আদর্শ একটি জায়গা। সবুজ পাহাড়, মেঘের রাজ্য ও ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী সংস্কৃতির মিশেলে এটি একটি দারুণ ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে।
হাবিব মিয়া
ভ্রমণকারীপ্রকৃতির এক দারুন সৃষ্টি, আলহামদুলিল্লাহ