নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় গেলেই উপভোগ করতে পারবেন অপূর্ব সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য। ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের সীমসাংগ্রী এলাকা থেকে উৎসারিত হয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে দুর্গাপুরে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, সোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্যক্তি অনেক আগে এই অঞ্চল দখল করেছিলেন, তার নামেই নদীটির নামকরণ হয় ‘সোমেশ্বরী নদী’।
নদীটির রূপ বদলায় ঋতুভেদে — শীতকালে পানি কমে গেলেও স্বচ্ছ জলে তার মাধুর্য অটুট থাকে, আর বর্ষায় নদী যেন নব যৌবন ফিরে পায়। যদিও বর্তমানে এটি কয়লা খনি এলাকার জন্য বেশি পরিচিত, তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কখনোই ঘাটতি হয়নি।
দুর্গাপুরে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখুন
একদিনের মধ্যে দুর্গাপুরের আশেপাশের স্পট ঘুরতে মোটরসাইকেল বা সিএনজি ভাড়া নেওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন:
- সোমেশ্বরী নদী
- গোলাপী পাহাড়
- গারো পাহাড়
- চীনা মাটির পাহাড়ের নীল পানির হ্রদ
- বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্প
- রানিখং চার্চ
- ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পিলার
যেভাবে দুর্গাপুর যাবেন
🚌 বাসে:
ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে সরকার পরিবহণ এবং জিন্নাত পরিবহণ বাস ছাড়ে। ভাড়া: ২৫০–৩৫০ টাকা। তবে বেশিরভাগ বাস সুখনগরী পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে ছোট নদী পার হয়ে রিকশা, মোটরসাইকেল বা বাসে দুর্গাপুর পৌঁছানো যায়।
- রিকশা: ৮০–১০০ টাকা
- মোটরসাইকেল: ২ জন ১০০ টাকা
- বাস: ২০ টাকা
🚂 ট্রেনে:
- হাওড় এক্সপ্রেস (রাত ১০:১৫)
- মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (রাত ১:১৫)
শ্যামগঞ্জ স্টেশনে নেমে বাস বা সিএনজিতে বিরিশিরি বাজার পৌঁছানো যায়। সহজভাবে যেতে চাইলে নেত্রকোনা এসে চল্লিশা বাজার থেকে মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়ায় পুরো স্পট ঘুরতে পারবেন।
✈️ রেলে আরও বিকল্প:
বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ভোর ৪:০০–৪:৩০ এর ট্রেনে জারিয়া স্টেশন গিয়ে সেখান থেকে ট্রলার, অটো বা মোটরসাইকেলে দুর্গাপুর যেতে পারেন (ভাড়া: ৮০–১০০ টাকা)।
ফেরার পথ
দুর্গাপুরের তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে রাত ১১:০০ ও ১১:৩০-এ দুটি নাইট কোচ ঢাকার মহাখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া জারিয়া স্টেশন থেকে দুপুর ১২:০০-তে ঢাকাগামী ট্রেন রয়েছে।
কোথায় থাকবেন
দুর্গাপুরে থাকার জন্য মাঝারি মানের বেশ কিছু হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে:
- জেলা পরিষদ ডাক বাংলো: ☎️ ০৯৫২৫৫৬০১৫
- YMCA রেস্ট হাউস: ☎️ ০১৭৪৩৩০৬২৩০
- YWCA গেস্ট হাউজ: ☎️ ০১৭১১০২৭৯০১
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি গেস্ট হাউজ: ☎️ ১৮৯২-৮২২৯০৫
মধ্যম মানের হোটেল:
- স্বর্ণা গেস্ট হাউস: ☎️ ০১৭১২২৮৪৬৯৮
- হোটেল সুসং: ☎️ ০১৯১৪৭৯১২৫৪
- বিরিশিরি রিসোর্ট: ☎️ ০১৯৭৪৯২০০৮২
- হোটেল জবা: ☎️ ০১৭১১১৮৬৭০৮
- নদীবাংলা গেস্ট হাউজ: ☎️ ০১৩২৪৯৭৪০৯৭
ভাড়া: ৩০০–৮০০ টাকা
কোথায় খাবেন
দুর্গাপুরে বেশকিছু সাধারণ মানের খাবারের হোটেল আছে। এর মধ্যে নিরালা হোটেল বেশ জনপ্রিয়। তবে ভারী খাবার পরিহার করে ডিম-পরোটা বা হালকা খাবার নেওয়া ভালো।
✨ বিশেষ মিস করবেন না: দুর্গাপুর বাজারে নেত্রকোণার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টি! এছাড়া বিরিশিরি বাজারেও মোটামুটি মানের খাবারের হোটেল পাওয়া যায়।
শেষ কথা
সোমেশ্বরী নদীর মনোমুগ্ধকর রূপ, পাহাড়, নীল জলের হ্রদ আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান — দুর্গাপুর সবকিছুতেই যেন এক অনন্য আকর্ষণ। একটু পরিকল্পনা করে গেলে অল্প খরচে, একদিনেই অনেক জায়গা ঘুরে ফিরে আসতে পারবেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!