স্বর্ণ মন্দির, যাকে মহাসুখ মন্দির বা বৌদ্ধ ধাতু জাদী নামেও ডাকা হয়, বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটায় অবস্থিত। যদিও নাম স্বর্ণ মন্দির, এখানে স্বর্ণের তৈরি কোনো স্থাপনা নেই। তবে মন্দিরের গায়ে সোনালি রঙের ছোঁয়ার জন্যই এটি ‘স্বর্ণ মন্দির’ নামে পরিচিত। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই অসাধারণ প্যাগোডা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান, যেখানে দেশ-বিদেশের অনেকে প্রার্থনা করতে আসেন।
এখানে গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক কালের একটি মূর্তি সংরক্ষিত আছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্যাগোডাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি, যা মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের ধর্মীয় স্থাপনার ছাপ বহন করে। পাহাড়ের উপর 'দেবতা পুকুর' নামে একটি ছোট জলাধারও রয়েছে, যা মন্দিরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, ডলফিন পরিবহনের বাস পাওয়া যায়। নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা, আর এসি বাসের ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা। বাসে সময় লাগে ৮-১০ ঘণ্টা।
যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে ঢাকা থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা বা মহানগর গোধূলি ট্রেনে চট্টগ্রাম পৌঁছে, বদ্দারহাট বা ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে বান্দরবানগামী বাসে যেতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকে বাস ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা।
বান্দরবান থেকে স্বর্ণ মন্দিরে যাতায়াত
বান্দরবান শহর থেকে সিএনজি, চান্দের গাড়ি বা জীপ ভাড়া করে স্বর্ণ মন্দিরে যেতে পারবেন। শুধু স্বর্ণ মন্দির দেখার জন্য ভাড়া ৩০০-৭০০ টাকা, আর আশেপাশের নীলাচল, মেঘলা, নীলগিরি ঘোরার জন্য ১০০০-১৫০০ টাকা লাগতে পারে। তবে রওনা দেওয়ার আগে ভালোভাবে দরদাম করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মন্দিরে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা ফি দিতে হয়, আর গাড়ি নিয়ে গেলে ২০-৩০ টাকা টোল দিতে হতে পারে।
কোথায় থাকবেন
বান্দরবানে বিভিন্ন বাজেটের রিসোর্ট, হোটেল ও রেস্টহাউজ রয়েছে।
- হোটেল হিল ভিউ: ৮০০-২৫০০ টাকা
- হোটেল হিলটন: ৮০০-৩০০০ টাকা
- হোটেল প্লাজা: ৮০০-৩০০০ টাকা
- রিভার ভিউ: ৬০০-২০০০ টাকা
- পর্যটন মোটেল: ১২০০-২৫০০ টাকা
সিজন (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) বা ছুটির দিনে ভাড়া বেশি হতে পারে, তাই আগেভাগে রুম বুক করা ভালো। অফসিজনে গেলে অনেক হোটেলেই ২০-৫০% ছাড় পাওয়া যায়।
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
বান্দরবান শহরে মাঝারি মানের বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে স্থানীয় ও সাধারণ বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। জনপ্রিয় কিছু রেস্টুরেন্ট হলো:
- তাজিং ডং ক্যাফে
- মেঘদূত ক্যাফে
- ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট
- রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট
- কলাপাতা রেস্টুরেন্ট
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- বিকেলের দিকে মন্দির ভ্রমণ করলে সোনালি আলোয় মন্দিরের সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে যায়।
- সন্ধ্যা ৬টার পর মন্দিরে প্রবেশ করা যায় না।
- শর্ট প্যান্ট বা লুঙ্গি পরে মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
- মন্দিরের অভ্যন্তরে জুতা পরে প্রবেশ করা নিষেধ।
- মন্দিরে গেলে ভিক্ষুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে ভুলবেন না।
স্বর্ণ মন্দিরের নীরব, শান্ত পরিবেশ আর পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে। তাহলে, কবে বান্দরবান যাচ্ছেন?
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!