ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত। যদিও মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা বা নির্মাণের সঠিক সময়কাল নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হয়, ১৫ শতকে খান-ই-জাহান আলী এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর রাজমহল থেকে আনা হয়েছিল বলে জানা যায়।
স্থাপত্যশৈলী ও বৈশিষ্ট্য
মসজিদটি বাহ্যিকভাবে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬০ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০৪ ফুট দীর্ঘ। ভিতরের মাপ অনুযায়ী দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৪৩ ফুট ও ৮৮ ফুট। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৮.৫ ফুট পুরু। পূর্ব দিকের দেয়ালে ১১টি খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার মধ্যে মাঝেরটি আকারে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ৭টি করে মোট ১৪টি দরজা রয়েছে।
প্রতিটি কোণে একটি করে গোল মিনার রয়েছে, মিনারের চূড়ায় বসানো গম্বুজগুলো মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। সামনের দুটি মিনারের মধ্যে একটি ‘রওশন কোঠা’ এবং অন্যটি ‘আন্ধার কোঠা’ নামে পরিচিত। মিনারের অভ্যন্তরে রয়েছে সিঁড়ি, যেখান থেকে এক সময় আযান দেওয়া হতো।
গম্বুজ ও স্তম্ভের বিন্যাস
মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে মোট ৬০টি পাথরের স্তম্ভ, যেগুলো ৬টি সারিতে সাজানো। এই স্তম্ভগুলোর উপরেই স্থাপন করা হয়েছে গম্বুজগুলো। ছাদে রয়েছে ৭৭টি গম্বুজ এবং চারটি মিনারে আরও ৪টি মিলিয়ে মোট গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১টি। এর মধ্যে ৭টি গম্বুজ মিহরাবের সারিতে এবং বাকি গুলো অর্ধগোলাকার।
মিহরাব ও দরজা
পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে মোট ১০টি মিহরাব, যার মধ্যে মাঝখানেরটি সবচেয়ে বড় ও শৈল্পিক। দক্ষিণ পাশে ৫টি ও উত্তর পাশে ৪টি মিহরাব রয়েছে। উত্তরের এক মিহরাবের জায়গায় রয়েছে একটি ছোট দরজা, যা অনেকে মনে করেন খান-ই-জাহানের প্রবেশ পথ ছিল।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
মসজিদের প্রায় ৫০০ মিটার পেছনে রয়েছে ফুলে খচিত বিবি বেগনির মসজিদ। এটি ঘুরে দেখা যেতে পারে। এছাড়া তার পেছনেই রয়েছে চুনাখোলা মসজিদ এবং মহাসড়কের পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।
ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য
প্রবেশ মূল্য
- বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য: ২০ টাকা
- বিদেশি পর্যটকদের জন্য: ২০০ টাকা
(মূল্য পরিবর্তন হতে পারে)
খোলার সময়সূচি
- রবিবার: সম্পূর্ণ দিন বন্ধ
- সোমবার: বিকাল ২টা থেকে খোলা
- গ্রীষ্মকাল: সকাল ১০টা – সন্ধ্যা ৬টা
- শীতকাল: সকাল ৯টা – বিকেল ৫টা
- দুপুর বিরতি: ১টা – ১:৩০ (সব সময়েই)
- শুক্রবার: জুম্মার নামাজের জন্য ১২:৩০ – ৩:৩০ পর্যন্ত বন্ধ
কিভাবে যাবেন?
বাসযোগে:
ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে মেঘনা, বনফুল, ফাল্গুনী, বলেশ্বর, দোলা, হানিফ, সোহাগ, ইগল, কমফোর্ট লাইন ইত্যাদি পরিবহনের বাস প্রতিদিন ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা। বাগেরহাট শহর থেকে রিকশায় মাত্র ৩০-৪০ টাকায় পৌঁছে যাবেন মসজিদে।
রেলযোগে:
ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে খুলনায় গিয়ে সেখান থেকে বাস বা সিএনজিতে করে মসজিদে যাওয়া যায়। খুলনা থেকে সময় লাগবে আনুমানিক ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন?
বাগেরহাটে থাকার মত বেশ কিছু মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। মমতাজ হোটেল তুলনামূলক ভালো হলেও দাম একটু বেশি। আশেপাশে অন্যান্য হোটেলগুলোর মধ্য থেকেও বেছে নিতে পারেন। চাইলে খুলনায় ফিরে গিয়েও উন্নত মানের আবাসিক হোটেলে থাকতে পারেন।
খাওয়ার ব্যবস্থা
বাগেরহাট শহরের বাসস্ট্যান্ড এবং দরগা এলাকা ঘিরে কিছু স্থানীয় মানের হোটেল রয়েছে, যেখানে খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। খাবার অর্ডার দেওয়ার আগে অবশ্যই মান ও মূল্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!