চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়, ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহর মাজার (Hazrat Shah Niyamatullah’s Shrine)। এটি মুঘল স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।
ইতিহাস ও পরিচিতি
হযরত শাহ্ সৈয়দ নেয়ামত উল্লাহ (রহঃ) ছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত সাধক, যিনি ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বংশধর এবং একাধারে আধ্যাত্মিক গুরু ও আলেম ছিলেন।
সুলতান শাহ্ সুজার রাজত্বকালে তিনি দিল্লির করোনিয়া থেকে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ শেষে বাংলায় আগমন করেন এবং ফিরোজপুরের রাজমহলে উপস্থিত হন। সুলতান শাহ্ সুজা তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করে বায়াত গ্রহণ করেন। এরপর তিনি গৌড় নগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থায়ীভাবে অবস্থান করে দীর্ঘ ৩৩ বছর ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। ১০৭৫ বা ১০৮০ হিজরি সনে তাঁর মৃত্যু হলে এই স্থানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
মাজারের স্থাপত্য ও গঠন
তাহাখানা কমপ্লেক্সের অন্তর্গত এই মাজারটি একটি সুউচ্চ ভিটের উপর স্থাপিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট স্থাপনা। মাজারের চারপাশে গাছপালা ও ইটের প্রাচীর দ্বারা ঘেরা।
- সমাধি ভবনটি বর্গাকার নকশায় নির্মিত, যার প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৯ ফুট।
- মূল সমাধির চারদিকে প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে।
- পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে তিনটি করে মোট ১২টি খিলান পথ রয়েছে, যার ফলে এটি বারদুয়ারী মাজার নামে পরিচিত।
- ধারণা করা হয়, সমাধির চারপাশে হযরত শাহ্ সৈয়দ নেয়ামত উল্লাহ (রহঃ)-এর পরিবারের সদস্য ও খাদেমদের কবর রয়েছে।
ওরশ ও ধর্মীয় আয়োজন
প্রতি বছর পহেলা মহররম হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহর মাজারে বিশেষ ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, ভাদ্র মাসের শেষ শুক্রবারকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ জনশ্রুতি অনুযায়ী এই দিনে তিনি গৌড় নগরীতে প্রথম আগমন করেন।
ওরশ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিগুলো:
- বৃহস্পতিবার আছরের পর সারারাতব্যাপী যিকির ও মিলাদ।
- শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর গিলাফ পরিবর্তন ও দোয়া মাহফিল।
- প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী মাজার জিয়ারত করতে আসেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে রেল ও সড়কপথ উভয়ই ব্যবহার করা যায়।
- বাস: মর্ডান, হানিফ, শ্যামলীসহ বিভিন্ন পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস নিয়মিত চলাচল করে। ভাড়া ৮৩০ থেকে ১৫০০ টাকা।
- ট্রেন: কমলাপুর থেকে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছানো যায়। আসনভেদে ভাড়া ৫১৫ থেকে ১১৭৩ টাকা।
- স্থানীয় যাতায়াত: চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরত্বে মাজারে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল রাজ
- হোটেল আল নাহিদ
- হোটেল স্বপ্নপুরী
- হোটেল রংধনু
- হোটেল নাজমা
- হোটেল স্কাই ভিউ
এছাড়া জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ও সার্কিট হাউসেও অনুমতি নিয়ে অবস্থান করা যায়।
কোথায় খাবেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে খাওয়ার জন্য কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেমন:
- সারুয়ার হোটেল
- ভাই ভাই হোটেল
- শরিফা হোটেল
এছাড়া শিবগঞ্জে গেলে ঐতিহ্যবাহী আদি চমচম অবশ্যই চেখে দেখতে পারেন।
অন্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণের সময় অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- খনিয়াদীঘি মসজিদ
- আলপনা গ্রাম (টিকইল)
- দারাসবাড়ী মসজিদ
- ছোট সোনা মসজিদ
আপনি যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানতে আগ্রহী হন, তাহলে হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহর মাজারসহ এই স্থানগুলো আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখতেই পারেন!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!