ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত এক ঐতিহাসিক সমাধিস্থল হলো কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে শহীদ হওয়া প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে এই স্থানে।
মুক্তিযুদ্ধ ও কুল্লাপাথরের ইতিহাস
মুক্তিযুদ্ধের সময় সীমান্তবর্তী কসবা উপজেলা ২ নং সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিল। ভারতের আগরতলায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কারণে কসবা বারবার পাকবাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। সংঘটিত যুদ্ধের ফলে শহীদের মৃতদেহ বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকত, এবং সেগুলো ঠিকমতো দাফন করা সম্ভব হতো না।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম ও তার আত্মীয়রা তখন তাদের পারিবারিক জমিতে এসব নাম-পরিচয়বিহীন শহীদদের দাফনের ব্যবস্থা করেন। তারা নিজ উদ্যোগে লাশ সংগ্রহ করে গোসল করিয়ে জানাজা শেষে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে কবর দিতেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২ জন বীরবিক্রম, ১ জন বীরউত্তম, ২ জন বীরপ্রতীক-সহ মোট ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী মারা গেলে তাদেরকেও এই কুল্লাপাথরেই দাফন করা হয়।
স্মৃতিসৌধ ও সংরক্ষণ
১৯৭২ সালে সরকারি উদ্যোগে শহীদ সমাধিস্থলে স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিফলক, কবর প্রাচীর, তোরণ, রেস্ট হাউজ, পুকুর, মসজিদ নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি কবরে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম-ঠিকানা লেখা হয় এবং এলাকাটি সবুজায়নের জন্য বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। আজও অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে এসে ১৯৭১ সালের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যান।
কিভাবে যাবেন?
- বাসে: ঢাকা থেকে সোহাগ, তিশা, তিতাস, রয়েল কোচ, বিআরটিসি এবং সোহাগ পরিবহনের বাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়া যায়। সেখান থেকে বাস বা সিএনজিতে কসবা হয়ে ১৪ কিলোমিটার দূরে কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধে পৌঁছানো সম্ভব।
- ট্রেনে: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে কসবা রেল স্টেশনে নেমে সেখান থেকে স্মৃতিসৌধে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়ক বাজার ও জগৎ বাজারে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল সাগর
- হোটেল সৈকত
- হোটেল স্টার
- আশিক প্লাজা
- অবকাশ আবাসিক হোটেল
- চন্দ্রিমা ও রহমান আবাসিক
কোথায় খাবেন?
কসবা উপজেলায় বেশ কয়েকটি ভালো মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দর্শনীয় স্থান
কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো:
- কালভৈরব মন্দির
- কেল্লা জামে মাজার
- বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি
- ধরন্তি হাওর
- হরিপুর জমিদার বাড়ি
- ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল
- কসবা বর্ডার হাট
- আখাউড়া চেকপোস্ট
কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অংশই নয়, বরং এটি বীর শহীদদের প্রতি আমাদের চিরস্থায়ী শ্রদ্ধার প্রতীক।
হাফেজ আবির হাসান
ভ্রমণকারীআল্লাহ আপনাদের, জান্নাত দান করুন, আমীন