ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (Commonwealth War Cemetery) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এক পবিত্র স্থান, যেখানে ৭৩৭ জন সৈনিক চিরশায়িত রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন জাপানি যুদ্ধবন্দি ও ১ জন বেসামরিক ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের টিপরা বাজার ও ময়নামতি সাহেব বাজারের মাঝখানে, ৪.৫ একর পাহাড়ি ভূমির উপর গড়ে ওঠা এই সমাধিক্ষেত্রটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র।
স্থানীয়রা একে "ইংরেজ কবরস্থান" বলে জানলেও, এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বী সৈন্যদের সমাধি রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বা আহত হয়ে মারা যাওয়া সৈন্যদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার ব্যক্তিদেরও এখানে সমাহিত করা হয়েছে। এছাড়াও, চট্টগ্রামের বাদশা মিয়া চৌধুরী রোডে আরও একটি কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে ৭৫৫ জন সৈন্যের কবর রয়েছে।
পরিদর্শনের সময়
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি সারা বছর সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে (ঈদের দুই দিন ব্যতীত)। তবে প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এটি সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে।
কীভাবে যাবেন?
কুমিল্লায় পৌঁছানো খুবই সহজ:
- ঢাকা থেকে বাসে: সায়েদাবাদ বা কমলাপুর থেকে উপকূল, তিশা, স্টার লাইন, বিআরটিসি, রয়েল বা এশিয়া লাইন পরিবহনের বাসে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টায় কুমিল্লা পৌঁছানো যায়। ভাড়া ২৫০-৪০০ টাকা।
- ঢাকা থেকে ট্রেনে: সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা বাদে অধিকাংশ চট্টগ্রামগামী ট্রেন কুমিল্লায় যাত্রাবিরতি দেয়। ট্রেন ভাড়া ১৭০-৭০২ টাকা।
- চট্টগ্রাম থেকে: প্রিন্স, সৌদিয়া বা ঢাকা গামী যেকোনো বাসে কুমিল্লা আসা যায়। চাইলে ট্রেনে বাসের তুলনায় দ্রুত কুমিল্লায় পৌঁছানো সম্ভব।
- স্থানীয় যাতায়াত: কুমিল্লা শহর থেকে সিএনজি বা বাসে সহজেই ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
কুমিল্লায় বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে:
- উন্নত মানের হোটেল: কুমিল্লা ক্লাব, সিটি ক্লাব (ভাড়া ১০০০-৩০০০ টাকা)।
- মাঝারি মানের হোটেল: হোটেল চন্দ্রিমা, শালবন, আবেদিন, সোনালী, নিদ্রাবাগ, আশীক রেস্ট হাউস, নূরজাহান (ভাড়া ২০০-৬০০ টাকা)।
খাবারের ব্যবস্থা
কুমিল্লা শহরে প্রচুর রেস্টুরেন্ট রয়েছে। স্থানীয় স্বাদ নিতে মনোহরপুর কালী বাড়ির মাতৃভাণ্ডারের আসল রসমালাই অবশ্যই চেখে দেখতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন:
- শালবন বিহার
- ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর
- লালমাই পাহাড়
- ব্লু-ওয়াটার পার্ক (পিকনিক স্পট)
এই ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরতে এসে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক টুকরো ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!