১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কুড়িগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম আক্রমণে শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কুড়িগ্রাম শহরের ঘোষপাড়ায় স্থাপন করা হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের পর কুড়িগ্রামের সাহসী জনগণও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মুক্তির লড়াইয়ে অংশ নেয়। ৩১ মার্চ স্থানীয় পুলিশ, আনসার, ছাত্র-জনতা ও ইপিআরদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনী পাক হানাদারদের প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকা রাখে। সংঘর্ষের একাধিক পর্বে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরবর্তীতে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা লালমনিরহাটের দিকে চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সহায়তা করেন।
শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতি
কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানি বাহিনী আবারও কুড়িগ্রামে আক্রমণ চালায়। তারা প্রায় বিনা বাধায় শহরে প্রবেশ করে এবং কুড়িগ্রাম উপ-কারাগারের ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্লাহসহ চারজন কারারক্ষীকে সার্কিট হাউসের কাছে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ হওয়া কারারক্ষীরা হলেন: লাল মোহাম্মদ, আনসার আলী, সাজ্জাদ হোসেন ও জহির উদ্দিন। পরবর্তীতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ লাল ও তাঁর সহযোদ্ধারা শহীদদের দাফনের ব্যবস্থা করেন। জেল ব্যারাকের পেছনে চার কারারক্ষীকে এবং কারাগারের পশ্চিম প্রান্তে শেখ হেদায়েত উল্লাহকে সমাহিত করা হয়। আজ সেই শহীদদের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে অমর হয়ে আছে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম পৌঁছানো বেশ সহজ।
- বাসে: আসাদগেট, কল্যাণপুর বা গাবতলি থেকে নাবিল, হক স্পেশাল, হানিফ, হাসান এন্টারপ্রাইজ, তানজিলা, এনার ইত্যাদি বাসে সরাসরি কুড়িগ্রাম যেতে পারবেন। বাসের ভাড়া ৯৫০-১৪০০ টাকার মধ্যে।
- ট্রেনে: কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস বা রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে সরাসরি কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়। টিকিটের দাম শ্রেণি অনুযায়ী ৬৪০-২,১৯৭ টাকা।
- স্মৃতি ফলকে যাওয়া: কুড়িগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক।
কোথায় থাকবেন?
কুড়িগ্রাম শহরের ঘোষপাড়া ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আশেপাশে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলো হলো:
- হোটেল অর্নব প্যালেস
- হোটেল ডিকে
- হোটেল স্মৃতি
- হোটেল নিবেদিকা
- হোটেল মেহেদী
কোথায় খাবেন?
খাবারের ব্যাপারে কুড়িগ্রামের বেশ কিছু জনপ্রিয় স্থান আছে।
- শাপলা মোড়ে নান্না বিরিয়ানি ও এশিয়া হোটেল-এর খাবার বেশ সুস্বাদু।
- স্থানীয় বিশেষ খাবারের মধ্যে সিদল ভর্তা ও তিস্তা নদীর বৈরাতী মাছ অবশ্যই চেখে দেখতে পারেন।
এই স্মৃতিবিজড়িত স্থান শুধু কুড়িগ্রামেরই নয়, পুরো বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কাহিনি জানার জন্য একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক থেকে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!