রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায়, উপজেলা কার্যালয় ও রেলওয়ে স্টেশনের কাছেই অবস্থিত ঐতিহাসিক দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ি। এই প্রাচীন রাজবাড়ি স্থানীয়ভাবে পীরগাছা রাজবাড়ি বা মন্থনা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত।
দেবী চৌধুরাণীর আসল নাম ছিল জয়াদুর্গা দেবী চৌধুরাণী। ১৭০৩-০৪ সালে, প্রায় ২৮ একর জমির ওপর জমিদার অনন্তরাম রায় এই রাজবাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন। রাজবাড়ির ভেতরে ত্রিবিগ্রহ মন্দির রয়েছে, যেখানে জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ন রায়ের তৈরি অন্নপূর্ণা বিশেশ্বর, শিব ও হরিহর বিগ্রহ এখনো পূজিত হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
দেবী চৌধুরাণী ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী এক সাহসী নারী। তিনি ভারতের প্রথম নারী নেত্রী হিসেবে সশস্ত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর অনুপ্রেরণায় "আনন্দমঠ" ও "দেবী চৌধুরাণী" উপন্যাস রচনা করেন।
আজও রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও প্রাচীন মন্দিরগুলো সেই সংগ্রামী দিনের সাক্ষ্য বহন করছে। প্রতিবছর এখানে বিভিন্ন পূজা-অর্চনার আয়োজন হয়। রাজবাড়ির কাচারী ঘর ও নাট্য মন্দির বর্তমানে পীরগাছা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিভাবে যাবেন
- বাসে: ঢাকার মোহাম্মদপুর, মহাখালী, গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে গ্রিনলাইন, আলহামরা, মীম, এস আর ট্র্যাভেলস, কুড়িগ্রাম পরিবহন ইত্যাদি বাসে রংপুর যেতে পারেন। ভাড়া: ৭৫০-১৫০০ টাকা (এসি/নন-এসি)।
- ট্রেনে: ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস বা কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে রংপুর পৌঁছানো যায়। ট্রেনের ভাড়া: ৫৮৫-২০১৩ টাকা (আসনভেদে)।
- রংপুর থেকে পীরগাছা: রংপুর শহর থেকে ২০ কিমি দূরত্বে পীরগাছা উপজেলা। উপজেলা পরিষদ থেকে রাজবাড়ি অর্ধ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।
কোথায় থাকবেন
রংপুরে বেশ কয়েকটি মানসম্মত হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল নর্থভিউ
- পর্যটন মোটেল
- দি পার্ক হোটেল
- হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার
- হোটেল তিলোত্তমা
- হোটেল কাশপিয়া
কোথায় খাবেন
রংপুর শহরে নানা মানের রেস্টুরেন্ট ও খাবার হোটেল আছে। তবে আমের মৌসুমে গেলে রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম খেতে ভুলবেন না!
দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ি ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। ইতিহাসের ছোঁয়া আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক স্থানটি!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!