বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে কুসুম্বা মসজিদ অন্যতম। প্রায় সাড়ে চারশত বছর পুরনো এই মসজিদটি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুশুম্বা গ্রামে অবস্থিত। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এবং মান্দা উপজেলা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরত্বে মসজিদটি অবস্থিত।
ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী
সুলতানি আমলের অন্যতম প্রতীক হিসেবে পরিচিত কুসুম্বা মসজিদ, যা বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটেও স্থান পেয়েছে। ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে আফগান শুর বংশের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের শাসনামলে সুলায়মান নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য নির্মিত একটি উঁচু আসন এখনো দেখা যায়।
মসজিদের প্রবেশপথের সামনে একটি কালো পাথরের বাক্স আকৃতির স্তম্ভ রয়েছে, যা লোকমুখে শিশুর কবর হিসেবে পরিচিত। তবে, এতে খোদাই করা আরবি লিপি থেকে ধারণা করা হয়, এটি হুসেন শাহের স্মৃতিচিহ্ন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।
কুসুম্বা মসজিদের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
চারকোণা কালো ও ধূসর পাথর এবং পোড়া মাটির সংমিশ্রণে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট এবং প্রস্থ ৪২ ফুট। এর ছাদ গ্রামীণ চালাঘরের মতো তৈরি করা হয়েছে, যা উত্তর-দক্ষিণ দিকে সামান্য বাঁকানো। প্রায় ৬ ফুট পুরু দেয়ালের প্রতিটি কোণে রয়েছে আটকোণা আকৃতির চারটি মিনার।
মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা—যার দুটি আকারে বড় এবং একটি ছোট। এর মিহরাব পাথরের খোদাই করা কারুকাজে সুসজ্জিত, যেখানে গোলাপের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মসজিদের বাইরের দেয়ালেও রয়েছে দৃষ্টিনন্দন নকশা, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের খিলানে সূক্ষ্ম কারুকাজের ছোঁয়া দেখা যায়।
মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে প্রায় ৭৭ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত একটি বিশাল দীঘি রয়েছে। মসজিদের সামনে থেকে পাথরের তৈরি সিঁড়ি দীঘির পানিতে নেমে গেছে। প্রায় ১২০০ ফুট লম্বা ও ৯০০ ফুট প্রশস্ত এই দীঘি গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের পানির চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কুসুম্বা মসজিদে যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে রাজশাহী গামী যেকোনো বাসে করে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের কাছাকাছি নেমে সেখান থেকে স্থানীয় পরিবহনে সহজেই কুসুম্বা মসজিদে পৌঁছানো যায়। এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৬৮০-১৪০০ টাকার মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে।
খাবার ও আবাসন ব্যবস্থা
নওগাঁ শহরে থাকার জন্য জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ বেশকিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। খাবারের জন্য দেলুয়াবাড়ী বাজারের বিভিন্ন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও রেস্তোরাঁয় স্বল্পমূল্যে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!