পরিকুন্ড জলপ্রপাত

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত পরিকুন্ড জলপ্রপাত (Parikunda Waterfall) অনেকের কাছেই এখনো অপরিচিত। মাধবকুন্ড ঝর্ণা থেকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের হাঁটাপথ দূরত্বে অবস্থিত এই অনন্যসুন্দর জলপ্রপাতটি সত্যিই একটি বিস্ময়। গভীর বনাঞ্চলের কারণে এবং প্রচারের অভাবে, প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া এই ঝর্ণা দেখতে খুব বেশি পর্যটক ভিড় করেন না। তবে এর বুনো সৌন্দর্য এবং পরিবেশের অসাধারণ আকর্ষণে এটি সত্যিই এক বিশেষ স্থান।

ঝর্ণার চারপাশে ঘন সবুজে ঘেরা পরিবেশ এবং পানির ধারা পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় যে সুর সৃষ্টি করে, তা মনকে এক অসাধারণ প্রশান্তি এনে দেয়। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি শীতল জলের ধারা শরীরে ছোঁয়ানোরও কোনো বাধা নেই। প্রকৃতির নৈসর্গিক নীরবতায় এই জলপ্রপাতের দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

কখন যাবেন

বর্ষাকাল পরিকুন্ড জলপ্রপাত ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। এ সময় ঝর্ণার পানির প্রবাহ এবং সৌন্দর্য পূর্ণরূপে দেখা যায়।

পরিকুন্ড জলপ্রপাত: যাতায়াত নির্দেশিকা

মাধবকুন্ড ইকোপার্কের মাধ্যমে প্রবেশ: পরিকুন্ড জলপ্রপাত মাধবকুন্ড ইকোপার্কের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। মাধবকুন্ড ঝর্ণার মূল পথে প্রবেশ করে বাঁ পাশে থাকা শিব মন্দির দেখতে পাবেন। মন্দিরের উল্টো দিকে থাকা একটি সিঁড়ি ধরে নিচে নামলে মাধবকুন্ড ঝর্ণার পানির ছড়ার দেখা মিলবে। ছড়ার পাথুরে পথ ধরে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই স্বপ্নময় পরিকুন্ড জলপ্রপাতের দেখা পাবেন।

ঢাকা থেকে মাধবকুন্ড যাওয়ার উপায়:

  1. বাসে যাত্রা:
    ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহন বা এনা পরিবহনের বাসে বিয়ানীবাজারগামী যাত্রায় কাঠালতলী বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে রিজার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০ টাকা) অথবা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫ টাকা) ভাড়া দিয়ে মাধবকুন্ড ইকোপার্কে পৌঁছানো যাবে।
  2. ট্রেনে যাত্রা:
    বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন (যেমন পারাবত, উপবন বা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস) ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট যায়। কুলাউড়া স্টেশনে নেমে কাঠালতলী বাজার হয়ে মাধবকুন্ডে পৌঁছাতে পারেন। রিজার্ভ সিএনজি (৪০০-৬০০ টাকা) বা লোকাল সিএনজি ব্যবহার করতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা

মাধবকুন্ড এলাকায় জেলা পরিষদের দুটি বাংলো এবং দুটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। অগ্রিম বুকিং দিয়ে সেখানে থাকা সম্ভব। তবে আরও ভালো হয় যদি সিলেট, মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত যাপন করেন। এতে পরদিন যেকোনো গন্তব্যে যাতায়াত সহজ হবে। সিলেট, মৌলভীবাজার এবং শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের হোটেল ও কটেজ আছে, যেখানে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।

খাবারের ব্যবস্থা

মাধবকুন্ড এলাকায় মাঝারি মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, তবে সেগুলোর খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। চাইলে সেখান থেকে নিজস্ব খাবার নিয়ে আসতে পারেন। সিলেটে ফিরে গেলে জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই বা পালকি রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন, যেখানে প্রায় ৩০ রকম ভর্তার স্বাদ পাওয়া যায়। মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল শহরেও মানসম্মত খাবারের হোটেল রয়েছে।

পরিকুন্ড জলপ্রপাত প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সত্যিই একটি অনন্য স্থান। বর্ষার সময় এটি ভ্রমণ করলে আপনি এর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

পরিকুন্ড জলপ্রপাত এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
222.92 কিমি
মৌলভীবাজার থেকে
65.6 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন