হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত একটি বিশাল মিঠা পানির জলাভূমি। এটি প্রায় ২৩৮টি বিল ও ১০টি নদীর সমন্বয়ে গঠিত এবং বর্ষাকালে এর আয়তন প্রায় ২০ হাজার হেক্টর হয়ে যায়। মাছের জন্য বিখ্যাত এই হাওর শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে খুবই জীবন্ত হয়ে ওঠে। এছাড়া এখানে প্রায় ১০০ প্রজাতির স্থানীয় পাখি দেখা যায়। হাওরের বিশাল ভূমি, বিল নির্ভর মানুষের জীবনধারা এবং অতিথি পাখির আহ্বানে ভ্রমণকারীরা হাকালুকি হাওরে আসতে থাকে।
হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময়
অতিথি পাখি দেখতে চাইলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হাকালুকি হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এই সময়ে হাওরের চারপাশ অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে থাকে। বর্ষাকালে হাওর সমুদ্রের মতো হয়ে ওঠে, তাই এই সময় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে আসা উচিত।
কিভাবে যাবেন
রুট প্ল্যান ১:
ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওরে যেতে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া আসতে হবে। কুলাউড়া থেকে অটোরিকশা বা রিকশা নিয়ে সরাসরি হাওরে যাওয়া যায়। কুলাউড়া থেকে হাকালুকি হাওরে যাওয়ার জন্য অটোরিকশা ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা এবং রিকশা ভাড়া ৬০-১০০ টাকা।
ঢাকা থেকে কুলাউড়া যাওয়ার জন্য সিলেটগামী বাসে উঠতে হবে। ঢাকা থেকে ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি, অথবা আবদুল্লাপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, ও এনা পরিবহনের এসি বাসে কুলাউড়া যাওয়ার ভাড়া ৭৫০-৯০০ টাকা এবং অন্যান্য এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া ৭০০-১৫০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কুলাউড়া যেতে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়া যাবে। শ্রেণীভেদে ট্রেনের ভাড়া ৩২০-৭৩১ টাকা।
রুট প্ল্যান ২:
কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে রাতে উপবন এক্সপ্রেসে চড়ে সিলেটের আগের স্টেশন মাইজগাও নামতে হবে। মাইজগাও থেকে ১ কিলোমিটার হাঁটলেই ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার পৌঁছাতে হবে। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে নৌকাঘাটে গিয়ে দরদাম করে প্রায় ১০-১৫ জনের দল নিয়ে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে হাকালুকি হাওর ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
হাওরের বিল ইজারাদারদের কুটিরে অনুমতি নিয়ে ২-৪ জন রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে, জোছনা রাতে তাঁবু ফেলে ক্যাম্পিং করাও একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। এছাড়া বড়লেখা শহরে থাকতেও পারেন, তবে নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
কোথায় খাবেন
হাকালুকি হাওর ভ্রমণকালে নৌকায় মাঝির সাথে কথা বলে বাজার করে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া হালকা খাবার যেমন বিস্কুট, চা, পাউরুটি, এবং পানি নিয়ে ভ্রমণ করা যেতে পারে। যদি হাওরের কর্মজীবী মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারেন, তবে তারা আপনাকে সস্তায় ভাত ও মাছের ঝোল খাওয়াতে পারে। এখানে গরু-মহিষের দুধও পাওয়া যায়।
হাকালুকি হাওর ভ্রমণে সঙ্গে নিন
ক্যাম্পিংয়ের জন্য তাবু, রেইনকোট, বড় ব্যাকপ্যাক, শীতকালীন জ্যাকেট, কাদা-পানিতে চলতে উপযোগী জুতা, গামছা, বাইনোকুলার, ক্যামেরা, প্রয়োজনীয় ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক, শুকনো খাবার, টর্চ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!