নীল দিগন্ত

নীল দিগন্ত পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে, থানচি উপজেলার জীবন নগর এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ৩.৫ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এই কেন্দ্রের পাহাড়চূড়া থেকে হাত বাড়ালেই যেন মেঘ ছোঁয়া যায়! সারি সারি সবুজ পাহাড়ের মাঝে সাদা মেঘের লুকোচুরি নীল দিগন্তকে আরও মোহনীয় করে তোলে।

নীলগিরি থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করলেই দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার, ভিউ পয়েন্ট, গোলঘর ও ক্যান্টিনের দেখা মিলবে। ভিউ পয়েন্ট থেকে সহজেই দেখা যায় বান্দরবানের বিখ্যাত পর্বতশৃঙ্গ — কেউক্রাডং ও তাজিংডং। এখানকার মেঘের রাজ্য আর সবুজ পাহাড়ের পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসীদের সহজ-সরল জীবনযাত্রাও সমানভাবে মুগ্ধ করবে আপনাকে।

কীভাবে যাবেন নীল দিগন্ত

নীল দিগন্তে যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলী, ডলফিন পরিবহনের বাস নিয়মিতভাবে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঢাকা থেকে বান্দরবান পৌঁছাতে সময় লাগে ৮-১০ ঘণ্টা।

  • নন-এসি বাস ভাড়া: ৮০০-৯০০ টাকা
  • এসি বাস ভাড়া: ১২০০-১৮০০ টাকা (পরিবহন ও সিটের মান অনুযায়ী)

ট্রেনে যেতে চাইলে:
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে, সেখান থেকে বান্দরবান যেতে হবে। পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণ, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি — এসব ট্রেনে চট্টগ্রাম পৌঁছানো যায়।

  • ট্রেনের ভাড়া: ৪০৫-১৩৯৮ টাকা (শ্রেণিভেদে)

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানগামী বাস:

  • বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহন: ২২০ টাকা
  • ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড: ২০০-৩০০ টাকা

বান্দরবান থেকে নীল দিগন্ত:
বান্দরবান শহর থেকে জীপ, চান্দের গাড়ি, সিএনজি বা লোকাল বাসে নীল দিগন্তে যাওয়া যায়। তবে রিজার্ভ গাড়ি নিলে সময় বাঁচে এবং আশপাশের দর্শনীয় স্থানও সহজে ঘুরতে পারেন।

  • জীপ/চান্দের গাড়ি ভাড়া: ৩০০০-৫০০০ টাকা (রাউন্ড ট্রিপ)
  • চান্দের গাড়ি: ১২-১৪ জন
  • ল্যান্ডক্রুজার জীপ: ৭-৮ জন
  • ছোট জীপ: ৪-৫ জন

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীল দিগন্তে যাওয়ার পথে বেশ কিছু জনপ্রিয় স্পট পড়ে, যেমন —

  • নীলগিরি
  • মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট
  • শৈল প্রপাত ঝর্ণা
  • সাইরু হিল রিসোর্ট
  • চিম্বুক পাহাড়

রিজার্ভ গাড়ি নিলে এসব জায়গায় স্বল্প সময়ের জন্য থেমে, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

কোথায় থাকবেন?

নীল দিগন্তে থাকার ব্যবস্থা নেই, তাই বেশিরভাগ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই বান্দরবান ফিরে আসেন। তবে বান্দরবান শহরে বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে।

  • হোটেল হিলটন: ৮০০-৩০০০ টাকা
  • হোটেল হিল ভিউ: ৮০০-২৫০০ টাকা
  • পর্যটন মোটেল (মেঘলা): ১২০০-২৫০০ টাকা
  • হোটেল প্লাজা: ৬০০-৩০০০ টাকা
  • রিভার ভিউ (সাঙ্গু নদীর পাড়ে): ৬০০-২০০০ টাকা
  • সাইরু হিল রিসোর্ট (চিম্বুক পাহাড়ে): ৮,০০০-২৫,০০০ টাকা

নীলগিরিতে সেনাবাহিনী পরিচালিত কটেজ: ৪,০০০-১০,০০০ টাকা। তবে এখানে থাকতে হলে আগেই বুকিং করতে হবে এবং সেনাবাহিনীর অফিসার পর্যায়ের পরিচিত কারও রেফারেন্স লাগতে পারে।

ভ্রমণ সিজন: ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি। সিজনে হোটেলের ভাড়া বেশি হতে পারে, তাই আগে থেকেই রুম বুকিং করা বুদ্ধিমানের কাজ। অফসিজনে ২০-৫০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

খাবার ব্যবস্থা

নীল দিগন্তে একটি ক্যান্টিন রয়েছে, যেখানে সাধারণ খাবার পাওয়া যায়। তবে বান্দরবান শহরে আরও ভালো কিছু খেতে চাইলে নিচের রেস্টুরেন্টগুলো ট্রাই করতে পারেন —

  • তাজিং ডং ক্যাফে
  • মেঘদূত ক্যাফে
  • ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট
  • রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট
  • কলাপাতা রেস্টুরেন্ট

ভ্রমণের সময় শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে রাখলে ভালো হয়, বিশেষ করে পাহাড়ি পথে দীর্ঘ সময় থাকতে হলে।

নীল দিগন্তের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • চিম্বুক পাহাড়
  • নীলগিরি
  • সাইরু হিল রিসোর্ট
  • মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
  • শৈল প্রপাত ঝর্ণা
  • স্বর্ণমন্দির
  • নীলাচল
  • বগালেক

ভ্রমণ টিপস

  • গাড়ি ভাড়া: সরাসরি জীপ স্ট্যান্ডে গিয়ে দরদাম করুন।
  • আদিবাসী পণ্য: শৈল প্রপাত বা চিম্বুকে কম দামে সংগ্রহ করতে পারেন।
  • সম্মান বজায় রাখুন: আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে সম্মান করুন।
  • সতর্কতা: পাহাড়ি রাস্তায় সাবধানে চলুন, পিচ্ছিল পথে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
  • পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সঙ্গে রাখুন।
  • গাড়ির ছাদে উঠবেন না: বিশেষ করে চান্দের গাড়ির ছাদে বসা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • দলগত ভ্রমণ: খরচ বাঁচাতে দলবেঁধে ঘুরতে পারেন।

নীল দিগন্তের মোহনীয় প্রকৃতি, মেঘের মিতালী আর পাহাড়ি সৌন্দর্য আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে। একটু পরিকল্পনা করে গেলে এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য উপভোগ করা আরও সহজ ও আনন্দময় হবে।

নীল দিগন্ত এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
231.58 কিমি
বান্দরবান থেকে
45.37 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
কাপ্তাই লেক
পলওয়েল পার্ক
ঝুলন্ত ব্রিজ
রাজবন বিহার
লেক ভিউ আইল্যান্ড
শুভলং ঝর্ণা
আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট
হ্যাপি আইল্যান্ড
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি
রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান
ধুপপানি ঝর্ণা
দেবতাখুম
মহামুনি বৌদ্ধ বিহার
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
মিলনছড়ি
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন