দেবতাখুম

দেবতাখুম বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এক মনোমুগ্ধকর জলাধার। "খুম" শব্দের অর্থ জলাধার, আর দেবতাখুম তারাছা খালের একটি অংশ, যার দুই পাশে উঁচু পাহাড় ঘেরা এবং নিচে গভীর পানির পাথুরে গহ্বর।

দেবতাখুম কেন জনপ্রিয়?

বান্দরবানে অনেক খুম থাকলেও দেবতাখুমের জনপ্রিয়তা বেশি, কারণ এটি তুলনামূলকভাবে সহজে ঘুরে দেখা যায়। স্থানীয়দের মতে, কিছু অংশে এর গভীরতা প্রায় ৫০ ফুট! খুমের দুই পাশেই ঘন জঙ্গল, আর উঁচু পাহাড়ের কারণে সরাসরি সূর্যের আলো ঢোকে না, ফলে খুমের ভেতরে যত এগোবেন, তত ঠান্ডা অনুভব করবেন। বাঁশের ভেলায় চেপে খুমের ভিতর যাওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই রোমাঞ্চকর!

দেবতাখুম ভ্রমণের সেরা সময়

বছরের যেকোনো সময়ে দেবতাখুমে যাওয়া যায়, তবে আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল। বর্ষায় পানি বেশি থাকায় চলাচল কঠিন হয়ে যায়, আর ফ্লাশ ফ্লাডের আশঙ্কা থাকে। তবে বর্ষা শেষে পানি কমে গেলে এবং স্বচ্ছ হলে খুমের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায়।

দেবতাখুম যাওয়ার উপায়

1. ঢাকা থেকে বান্দরবান:
   • এসি বাস: হানিফ, সেন্টমার্টিন, সৌদিয়া (ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা)
   • নন-এসি বাস: হানিফ, এস আলম, ইউনিক (ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা)
   • ট্রেন: ঢাকা → চট্টগ্রাম (ভাড়া ৪০৫-১৩৯৮ টাকা), তারপর চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান (ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা)
2. বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি ও কচ্ছপতলী:
   • বান্দরবান → রোয়াংছড়ি (১৮ কিমি, বাস ভাড়া ৬০ টাকা)
   • রোয়াংছড়ি → কচ্ছপতলী (৭ কিমি, সিএনজি ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা)
   • চাইলে সরাসরি বান্দরবান শহর থেকে জিপ (২০০০-২৫০০ টাকা) বা সিএনজি রিজার্ভ করে কচ্ছপতলী যেতে পারেন।
3. অনুমতি ও গাইড:
   • রোয়াংছড়ি থানা ও কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে (আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিয়ে, ফি ৫০ টাকা)
   • গাইড বাধ্যতামূলক, সারাদিনের জন্য ১০০০ টাকা (এক গাইড ১০ জন পর্যন্ত টিম নিয়ে যেতে পারেন)
   • প্রবেশ ফি, লাইফ জ্যাকেট, ও ভেলা ব্যবহারের খরচ: জনপ্রতি ১৫০ টাকা

গাইড নম্বর:

• রুন্ময় লাল: 01857 272095
• রকি: 01855 360264

খাবার ও থাকার ব্যবস্থা

দেবতাখুমের আশেপাশে খাবারের ব্যবস্থা নেই। কচ্ছপতলী বাজারে আগেই খাবারের অর্ডার দিয়ে যেতে হয়। গাইড এ ব্যাপারে সাহায্য করবে। শহরে ফেরার পথে হোটেল হিল ভিউ, হোটেল প্লাজা, হিল্টন বা নাইট হেভেনে রাতযাপন করতে পারেন (খরচ ১০০০-৫৫০০ টাকা)।

ভ্রমণ সতর্কতা

• জাতীয় পরিচয়পত্র বা ফটো আইডির ফটোকপি সঙ্গে রাখুন।
• কচ্ছপতলীর পর মোবাইল নেটওয়ার্ক নাও পেতে পারেন।
• ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট বা রাবারের স্যান্ডেল নিন।
• ভেলায় চড়ার সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরুন।
• সাতার না জানলে পানিতে নামবেন না।
• পানির নিচে বড় বড় পাথর থাকে, সাবধানে চলাফেরা করুন।
• দেবতাখুমে ক্যাম্পিং করা নিষেধ।

দেবতাখুমের মায়াবী সৌন্দর্য, নির্জনতা, আর অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে গেলে অবশ্যই এই তথ্যগুলো মনে রাখবেন!