চন্দ্রমহল ইকো পার্ক

চন্দ্রমহল ইকো পার্ক বাগেরহাট জেলা সদরের রঞ্জিতপুর গ্রামে, খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি মনোমুগ্ধকর পর্যটন কেন্দ্র এবং পিকনিক স্পট। এই ইকো পার্কের মূল আকর্ষণ হলো একটি অনবদ্য ভবন, যা ভারতীয় তাজমহলের আদলে নির্মিত। ভবনটির নাম ‘চন্দ্রমহল’, যার নামকরণ করা হয় উদ্যোক্তা সেলিম হুদার স্ত্রী নাসিমা হুদা চন্দ্রার নামে। ২০০২ সালে প্রায় ৩০ একর জায়গাজুড়ে এই অনন্য পার্কটির যাত্রা শুরু হয়।

চন্দ্রমহল ভবনটি চারদিক থেকে পানি দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং মূল ভবনে প্রবেশ করতে হলে পানির নিচে নির্মিত একটি সুরঙ্গ পথ পেরিয়ে যেতে হয়। সূর্যের আলো ভবনের সোনালি রঙে প্রতিফলিত হয়ে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করে, যা যে কোনো দর্শনার্থীর মন কেড়ে নেয়।

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিনোদনের সম্মিলন

এই ইকো পার্কে নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে যা দর্শনার্থীদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে। এখানে দেখা যাবে দেশ-বিদেশের পুরোনো মুদ্রা, ডাকটিকিট, যুদ্ধকালীন অস্ত্র, প্রাচীন অলংকার, ধর্মীয় নিদর্শন, পাথরের আসবাবপত্র, দুর্লভ পান্ডুলিপি, ও মৃৎশিল্পের নানা নিদর্শন।

শুধু তাই নয়, পার্কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সৃজনশীল ভাস্কর্য, বাঁশের তৈরি ঘর, ঐতিহাসিক প্রতীকী কাঠামো যেমন রাজাকারের ফাঁসির মঞ্চ, কৃত্রিম রেললাইন, পিকনিক স্পট ও রেস্টুরেন্ট। পার্কে একটি মিনি চিড়িয়াখানাও রয়েছে যেখানে দেখা যাবে বানর, হরিণ, বনবিড়াল, তিতপাখি, তুর্কি মুরগি, সাদা ময়ূর, ঈগল, বক, কুমির সহ নানা প্রজাতির পশু ও পাখি।

দর্শনার্থীদের জন্য সময়সূচী ও প্রবেশ ফি

চন্দ্রমহল ইকো পার্ক প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশের জন্য প্রতিজনের টিকিট মূল্য ৫০ টাকা

যাতায়াত ব্যবস্থা

বাসযোগে:
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেঘনা, বনফুল, ফাল্গুনী, বলেশ্বর, দোলা ইত্যাদি পরিবহনের বাস বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। গাবতলী থেকেও সোহাগ, হানিফ, ইগল পরিবহনের বাস পাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।

বাসে ভ্রমণের সময় চালককে “চন্দ্রমহল” বা “রঞ্জিতপুর” স্টপেজে নামিয়ে দিতে বললেই সহজে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।

ট্রেনে:
ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করে এরপর বাস বা লোকাল পরিবহনে করে মাত্র ৪০ মিনিটে বাগেরহাটে পৌঁছানো যায়।

লোকাল যাতায়াত:
বাগেরহাট শহর থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বা সিএনজিতে করে সহজেই চন্দ্রমহল ইকো পার্কে পৌঁছানো যায়।

থাকার ব্যবস্থা

বাগেরহাট শহরে বেশ কিছু সাশ্রয়ী ও মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে।
হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • মমতাজ হোটেল (রেল রোড)
  • হোটেল অভি – ☎ ০১৮৩৩-৭৪২৬২৩
  • হোটেল আল আমিন – ☎ ০৪৬৮-৬৩১৬৮ / ০১৭১৮-৬৯২৭৩৭
  • হোটেল মোহনা – ☎ ০৪৬৮-৬৩০৭৫ / ০১৭২২-৮৫৮৩১৩

এখানে ৪০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে রাত্রি যাপন করা সম্ভব। প্রয়োজনে খুলনা শহরে ফিরেও রাত কাটানো যায়, কারণ খুলনা থেকে বাগেরহাটে যেতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা।

খাবারের ব্যবস্থা

চন্দ্রমহল ইকো পার্কের ভেতরেই কয়েকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট শহরের বাসস্ট্যান্ড ও দরগা এলাকার আশেপাশে সাধারণ মানের খাবার হোটেল পাওয়া যায়। খাবার অর্ডার দেওয়ার আগে দাম ও মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ভালো।

চন্দ্রমহল ইকো পার্ক এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
148.11 কিমি
বাগেরহাট থেকে
12.21 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
চুনাখোলা মসজিদ
বিবি বেগনী মসজিদ
সিঙ্গাইর মসজিদ
বাগেরহাট জাদুঘর
ষাট গম্বুজ মসজিদ
খান জাহান আলীর মাজার
রণবিজয়পুর মসজিদ
খান জাহান আলী সেতু
শহীদ হাদিস পার্ক
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি
খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর
মোংলা বন্দর
করমজল পর্যটন কেন্দ্র
তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ
ডিসি পার্ক, পিরোজপুর
রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি
বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ
কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক
ভরতের দেউল
বিল রুট ক্যানেল

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন