খুলনার বিখ্যাত রূপসা নদী কবি জীবনানন্দ দাসের কবিতায় এক অনন্য সৌন্দর্যে ধরা দিয়েছে—
"রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেড়া পালে ডিঙা বায়;
রাঙ্গা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে"।
এই মনোমুগ্ধকর নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে খানজাহান আলী সেতু, যা সাধারণভাবে রূপসা সেতু নামেই পরিচিত। এই সেতুটি খুলনাবাসীর জন্য যেমন যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তেমনি এক নান্দনিক দর্শনীয় স্থানও। এটি খুলনা শহরকে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে, ফলে একে খুলনার প্রবেশদ্বারও বলা হয়। জাপানের সহায়তায় নির্মিত এই সেতু এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক স্থান হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে উৎসব ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে।
রূপসা সেতুর বিবরণ
রূপসা সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬০ কিলোমিটার। পথচারী ও ছোট যানবাহনের জন্য বিশেষ লেনের ব্যবস্থা রয়েছে, যা যাতায়াতকে আরও সহজ করে তুলেছে। সেতুর দুই পাশে চারটি সিঁড়ি রয়েছে, যা দিয়ে মূল সেতুতে ওঠা যায়। দিনের বেলায় নদীর পাড়ে ভ্রমণপ্রেমীদের আড্ডা আর রাতের বেলায় আলো ঝলমলে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে খুলনা শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করা সত্যিই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
কিভাবে যাবেন?
খুলনা শহর থেকে রূপসা সেতুর দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে খুলনায় পৌঁছে সেখান থেকে ইজিবাইক বা রিকশায় সহজেই সেতুতে পৌঁছানো যায়।
ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার উপায়:
সড়কপথ:
ঢাকার গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ থেকে এ কে ট্র্যাভেলস, সোহাগ, হানিফ, ফাল্গুনি, সেবা গ্রিন লাইন ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাস পাওয়া যায়। বাস ভাড়ার পরিমাণ ৬৫০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা বাসের শ্রেণিভেদে পরিবর্তিত হয়।
রেলপথ:
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস ও জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন খুলনাগামী। টিকিটের মূল্য ৪৪৫ থেকে ২,৩৮৫ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
নৌপথ:
নৌপথে ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকার বাদামতলী ঘাট থেকে প্রতি বুধবার পি এস মাসহুদ বা পি এস অস্ট্রিচ নামের স্টিমারে মোংলা হয়ে খুলনায় পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
খুলনা শহরে বিভিন্ন মানের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। জনপ্রিয় কিছু হোটেল ও সরকারি রেস্ট হাউজ হলো:
বেসরকারি হোটেল:
- টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল
- সিটি ইন লিমিটেড
- হোটেল ক্যাসল সালাম
- ওয়েস্টার্ন ইন
- হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল মিলেনিয়াম
সরকারি রেস্ট হাউজ:
- সার্কিট হাউজ
- এলজিইডি রেস্ট হাউজ
- বিআইডব্লিউটিসি রেস্ট হাউজ
- খুলনা সিটি কর্পোরেশন রেস্ট হাউজ
- মোংলা বন্দর রেস্ট হাউজ
- সড়ক ও জনপথ রেস্ট হাউজ
কোথায় খাবেন?
খুলনায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে, যেখানে বাঙালি ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি ফাস্ট ফুড ও চাইনিজ খাবারও পাওয়া যায়।
জনপ্রিয় খাবার:
- চুইঝালের ঘুগনি ও ঝালমুড়ি
- চুইঝালের খাসি ও গরুর মাংস
- খালিশপুরের মেগার মোড়ের বিরিয়ানি
- ১ টাকার পুরি
- খুলনার বিখ্যাত সন্দেশ
- গলদা চিংড়ির পদ
খুলনার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
রূপসা সেতু দর্শনের পাশাপাশি খুলনার অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানও ঘুরে দেখতে পারেন:
খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর – স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার উপযুক্ত স্থান।
শহীদ হাদিস পার্ক – মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর স্মৃতিবিজড়িত পার্ক।
করমজল পর্যটন কেন্দ্র – সুন্দরবনের কুমির ও হরিণ অভয়ারণ্য।
সুন্দরবন ও কটকা সমুদ্র সৈকত – প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়।
উপসংহার
খুলনার রূপসা সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি পর্যটকদের জন্যও দারুণ আকর্ষণের কেন্দ্র। সন্ধ্যার আলোয় ঝলমলে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে শহর ও নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। খুলনা সফরে গেলে অবশ্যই এই স্থানে ঘুরে আসতে পারেন!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!