দামতুয়া ঝর্ণা বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত, যা বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি। এর আকার, সৌন্দর্য এবং দুর্গম পথের জন্য এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। ঝর্ণাটি "তুক অ ঝর্ণা", "লামোনই" ও "ডামতুয়া ঝর্ণা" নামেও পরিচিত। দামতুয়া যাওয়ার পথে ওয়াংপা ঝর্ণা, তুক অ ঝিরি ঝর্ণা এবং আরও বেশ কিছু ছোট-বড় ক্যাসকেড দেখা যায়। তবে ঝর্ণায় পৌঁছাতে হলে ১২-১৩ কিলোমিটার পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয়, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য অনুপযুক্ত হতে পারে।
দামতুয়া ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
যে কোনো সময় ভ্রমণ করা গেলেও বর্ষা ও বর্ষার পরপরই ঝর্ণার জলধারা সবচেয়ে সুন্দর ও প্রাণবন্ত থাকে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পথ পিচ্ছিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তাই আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।
কিভাবে যাবেন দামতুয়া ঝর্ণা?
- আলীকদম পৌঁছানো:
ঢাকা থেকে শ্যামলি বা হানিফ বাসে সরাসরি আলীকদম যাওয়া যায়। ভাড়া ৮৫০ টাকা। এছাড়া কক্সবাজারগামী বাসে চকরিয়া নেমে, সেখান থেকে লোকাল বাস বা চান্দের গাড়িতে আলীকদম যাওয়া যায়। চকরিয়া থেকে আলীকদমের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। - আলীকদম থেকে আদুপাড়া:
আলীকদমের পানবাজার থেকে বাইক ভাড়া করে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত আদুপাড়া গ্রামে যেতে হবে। জনপ্রতি বাইক ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা (দরদাম করে নেওয়া ভালো)। দল বেশি হলে চান্দের গাড়ি/জীপও ভাড়া করা যায়। পথে ১০ কিলোমিটার গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফোন নম্বর দিয়ে এন্ট্রি করতে হবে। বিকেল ৫টার মধ্যে ফেরত এসে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক। - আদুপাড়া থেকে ঝর্ণার পথে ট্রেকিং:
আদুপাড়া থেকে দামতুয়া ঝর্ণা দেখতে যেতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। স্থানীয় গাইড নিয়ে যাওয়া উত্তম, যার ফি ৫০০-৮০০ টাকা (দরদাম করে নিন)। ঝর্ণার পাশাপাশি আশপাশে আরও কিছু ঝর্ণা ও ঝিরি দেখা যায়।
থাকার ব্যবস্থা
ঝর্ণার পথে রাতযাপন অনুমোদিত নয়, তাই একই দিনে আলীকদম ফিরে আসতে হবে। আলীকদমে সাধারণ মানের হোটেল থাকলেও বেশি সুবিধা না থাকায় সেইদিনই চকরিয়া বা সরাসরি ঢাকায় ফিরে যাওয়াই ভালো।
দ্যা দামতুয়া ইন
ঠিকানা: আলীকদম উপজেলা রোড, বান্দরবান।
যোগাযোগ: ০১৭৪৮-৯১২১২৭
খাবার ব্যবস্থা
আলীকদম ও পানবাজারে দেশীয় খাবারের হোটেল রয়েছে। তবে ঝর্ণার পথে লাঞ্চের জন্য শুকনো খাবার (বিস্কুট, চকলেট, কলা) সাথে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। আদুপাড়ায় ছোট দোকান থেকে হালকা নাস্তা পাওয়া যায়।
সতর্কতা ও পরামর্শ:
- পাথুরে, পিচ্ছিল পথের জন্য ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা পরুন।
- ব্যাগের ওজন যত কম রাখা যায়, তত ভালো।
- পানির বোতল, স্যালাইন, শুকনো খাবার ও প্রাথমিক ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
- পথে জোঁকের সমস্যা হতে পারে, তাই লম্বা মোজা পরা ভালো।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন।
- ট্রেইল বা ঝর্ণায় আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
- ভাড়া নিয়ে আগে থেকেই দরদাম করে নিন।
- স্থানীয় মানুষের সাথে সম্মানজনক আচরণ করুন।
- দলবদ্ধ ভ্রমণ খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
দামতুয়া ঝর্ণা প্রকৃতির এক অনন্য নিদর্শন, যেখানে পৌঁছানো কঠিন হলেও সৌন্দর্য দেখে সমস্ত ক্লান্তি ভুলে যাবেন। সঠিক পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি থাকলে এই অ্যাডভেঞ্চারময় যাত্রা আপনার স্মৃতিতে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!