ভীমের জাঙ্গাল (Bhimer Jangal) বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা মধ্যযুগের প্রথম দিকে বরেন্দ্র অঞ্চলে নির্মিত হয়েছিল। প্রায় ৭০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এই স্থাপনাটি মহাস্থানগড়ের তিন দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। ধারণা করা হয়, অতীতকালে এটি একটি প্রতিরোধক সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যা বন্যাপ্রবণ অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি প্রতিরক্ষামূলক কাজেও ব্যবহৃত হত।
বিস্তৃতি ও অবস্থান
ভীমের জাঙ্গালের বিস্তৃতি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে এর প্রধান অংশটি বগুড়া অঞ্চলে পড়েছে। কারও মতে, এটি ঘোড়াঘাট থেকে শুরু হয়ে নীলফামারীর ডোমার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, আবার অনেকে মনে করেন এটি ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। বর্তমান সময়ে এর ধ্বংসাবশেষ সিরাজগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে শেরপুর, বগুড়া শহর সংলগ্ন করতোয়া নদীর পশ্চিম তীর ধরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের দামুকদহ বিলে গিয়ে শেষ হয়েছে। এছাড়াও দিনাজপুরের বিরাট নগর ও ঘোড়াঘাট পর্যন্ত এর কিছু নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব
ভীমের জাঙ্গালে ৩৬টি প্রত্নতাত্ত্বিক “গড়” বা মাউন্ড রয়েছে, যার মধ্যে গোবিন্দভিটা ও ভাসু বিহার সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি গড়ের সঙ্গে ঐতিহাসিক কাহিনি ও লোককথা জড়িয়ে আছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, একসময় ভীম নামের এক রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে তার পরিচয় সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে—কেউ মনে করেন তিনি বারো শতকের রাজা, আবার কেউ বলেন তিনি মহাভারতের দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম বা ভগীরথ রাজবংশের উত্তরাধিকারী।
ভীমের জাঙ্গাল নির্মাণের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, এটি বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণশৈলীর দিক থেকে এটি অনেকটা ইউরোপের বৃত্তাকার দুর্গের অনুরূপ বলে মনে করা হয়।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা নিজস্ব পরিবহনে বগুড়া পৌঁছানো যায়। গাবতলী, মহাখালী, শ্যামলী, আব্দুল্লাহপুর ও কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী, এস আর ট্র্যাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, আগমনী এক্সপ্রেস, মানিক এক্সপ্রেস, নাবিল পরিবহন ও আল হামরা পরিবহনের বাসযোগে বগুড়া যাওয়া যায়। ভাড়া বাসের মান অনুযায়ী ৫৫০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
রেলপথে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বুড়িমারী, রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে বগুড়ায় পৌঁছানো যাবে। ট্রেনের শ্রেণিভেদে ভাড়া ৪৭৫ থেকে ১০৯৩ টাকা হতে পারে। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে সহজেই ভীমের জাঙ্গালের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
বগুড়ায় থাকার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন মোটেল
- হোটেল নাজ গার্ডেন
- মম ইন
- সেঞ্চুরি মোটেল
- হোটেল সিয়েস্তা
- আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল
- নর্থওয়ে মোটেল
কোথায় খাবেন?
বগুড়ায় খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে—
- সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
- মায়ের দোয়া হোটেল
- অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট
- চাপ কর্নার
- হোটেল সাফিনা
এছাড়াও, বগুড়ার বিখ্যাত দই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজোড়া সমাদৃত।
বগুড়ার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
বগুড়ায় ভীমের জাঙ্গাল ছাড়াও দর্শনীয় কিছু স্থান রয়েছে, যেমন:
- মহাস্থানগড়
- খেরুয়া মসজিদ
- গোকুল মেধ
- রানী ভবানীর পিতৃালয়
এই ঐতিহাসিক স্থানগুলো একবার ঘুরে এলে বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়ের সাক্ষী হওয়া যাবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!