বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মানকালীর কুণ্ড (Mankali’s Kund), যা প্রাচীন সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে তৎকালীন পাকিস্তান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
মানকালীর কুণ্ডের ইতিহাস
মহাস্থানগড়ের মজা পুকুরের পূর্ব পাশে অবস্থিত মানকালীর কুণ্ড ঢিবিতে প্রবেশ করলে প্রথমেই দেখা মেলে একটি তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড এবং পাশে ছোট্ট এক জলাশয়। স্থানীয়ভাবে এই জলাশয়কে “কুণ্ড” বা “কূপ” বলা হয়ে থাকে। জলাশয় ও ঢিবির সমন্বয়ে এর নামকরণ করা হয়েছে মানকালীর কুণ্ড।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায়, রাজা মানসিংহ ও তার ভাই তানসিংহ এখানে প্রথমে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে ঘোড়াঘাটের জমিদারগণ এখানে একটি মসজিদ স্থাপন করেন। এছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া জৈন প্রতিমা দেখে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি একসময় জৈন ধর্মাবলম্বীদের একটি কেন্দ্রস্থল ছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও আবিষ্কৃত নিদর্শন
১৯৬৫-৬৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে এখানে খনন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- সুলতানী আমলের ২৬.২১ x ১৪.৫৪ মিটার আয়তনের একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ
- পাল যুগে নির্মিত একটি মন্দিরের অবশেষ
- শুঙ্গযুগের পোড়ামাটির ফলক
- উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মৃৎপাত্রের টুকরো
- ব্রোঞ্জের গণেশ মূর্তি
- জৈন ধর্মীয় কিছু প্রতিমা
- নকশাকৃত পুরনো ইটের টুকরো
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়া যায় বাস, ট্রেন কিংবা নিজস্ব যানবাহনে।
বাসে:
ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, শ্যামলী, আব্দুল্লাহপুর ও কল্যাণপুর থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস বগুড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। যেমন:
- শ্যামলী পরিবহন
- এস আর ট্র্যাভেলস
- হানিফ এন্টারপ্রাইজ
- নাবিল পরিবহন
- আল হামরা পরিবহন
ভাড়া: ৫৫০ থেকে ১৩০০ টাকা (বাসের মান অনুযায়ী)।
ট্রেনে:
ঢাকা থেকে বুড়িমারী, রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে বগুড়া পৌঁছানো যায়।
ভাড়া: ৪৭৫ থেকে ১০৯৩ টাকা (শ্রেণি অনুযায়ী)।
বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে মানকালীর কুণ্ড অবস্থিত। শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া করে সহজেই সেখানে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
বগুড়ায় রাত্রিযাপনের জন্য বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে, যেমন:
- বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল
- হোটেল নাজ গার্ডেন
- মম ইন
- সেঞ্চুরি মোটেল
- আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল
- নর্থওয়ে মোটেল
এছাড়া সরকারি অনুমতি নিয়ে সার্কিট হাউজ এবং পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতেও থাকার ব্যবস্থা করা যায়।
কোথায় খাবেন
বগুড়া শহরে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেমন:
- সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
- মায়ের দোয়া হোটেল
- অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট
- চাপ কর্নার
- হোটেল সাফিনা
এছাড়া বগুড়ার বিখ্যাত দই অবশ্যই চেখে দেখার মতো একটি খাবার, যা দেশজুড়ে প্রসিদ্ধ।
শেষ কথা
প্রাচীন ইতিহাস ও স্থাপত্যের নিদর্শন দেখতে ভালোবাসেন? তাহলে মানকালীর কুণ্ড হতে পারে আপনার জন্য দারুণ এক গন্তব্য। বগুড়ার এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে এসে ইতিহাসের ছোঁয়া অনুভব করতে পারেন আপনি।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!