পরশুরামের প্রাসাদ

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়, মহাস্থানগড়ের সীমানার কাছেই অবস্থিত পরশুরামের প্রাসাদ (Parsuram Palace)। মহাকালী কুণ্ড থেকে প্রায় ২০০ মিটার উত্তরে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি অবস্থিত। কিংবদন্তি অনুযায়ী, এটি বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের নামে নামকরণ করা হয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে ‘হিন্দু নৃপতি পশুরামের প্যালেস’ নামে পরিচিত।

ঐতিহাসিক পটভূমি

প্রাচীন বাংলার পাল রাজাদের শাসনামলে (৭৫০-১১২৪ খ্রিস্টাব্দ) এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। ১৯০৭, ১৯৬১ এবং ১৯৯৫ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে এখানে তিনটি ভিন্ন নির্মাণ যুগের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। ১৯৬১ সালের খননে পাল, মুসলিম ও ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। ধারণা করা হয়, পাল যুগে নির্মিত স্থাপনার ধ্বংসাবশেষই পরশুরামের প্রাসাদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

খননকালে পাওয়া উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুদ্রা, পোড়ামাটির নকশা করা ইট, পাল আমলের ভবনের ধ্বংসাবশেষ, বিষ্ণু পটের ভগ্নাংশ এবং প্রাচীন মৃৎপাত্র। সুলতানি আমলের নিদর্শনের মধ্যে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির ফলক, প্রস্তর নির্মিত বিষ্ণু পট্টের অংশ ও কড়ি।

স্থাপত্য ও কাঠামো

পরবর্তীকালে আরও খননের ফলে এখানে আঠারো শতকের একটি আবাসিক স্থাপনার অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। ইট, চুন, সুরকি ও চুনকাম ব্যবহার করে নির্মিত কাঠামোটিকে পরশুরামের প্রাসাদের মূল অংশ হিসেবে ধরা হয়। এই প্রাসাদ চারটি অংশে বিভক্ত – কক্ষ, সোপান শ্রেণী, সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশদ্বার।

প্রাসাদের পাশে অবস্থিত “জীয়ৎ কুণ্ড” নামের একটি কূপ ঘিরে রয়েছে একটি কিংবদন্তি। কথিত আছে, শাহ্‌ সুলতান বলখী মাহীসওয়ারের সঙ্গে যুদ্ধের সময় পরশুরাম এই কূপের জল ব্যবহার করে আহত সৈন্যদের পুনরুজ্জীবিত করতেন।

কিভাবে যাবেন?

পরশুরামের প্রাসাদ পরিদর্শন করতে চাইলে প্রথমে বগুড়ায় পৌঁছাতে হবে।

বাসে যাত্রা:
ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালী থেকে এসআরটিআর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া, ডিপজল এবং শাহ্‌ ফতেহ আলী পরিবহনের বাস চলাচল করে। ভাড়া বাসের মান অনুযায়ী ৫৫০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

ট্রেনে যাত্রা:
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বুড়িমারী, রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে বগুড়া যাওয়া যায়। ট্রেনের শ্রেণীভেদে ভাড়া ৪৭৫ থেকে ১০৯৩ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

স্থানীয় যাতায়াত:
বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে সহজেই পরশুরামের প্রাসাদে পৌঁছানো যাবে।

কোথায় থাকবেন?

বগুড়ার চারমাথা ও বনানী এলাকায় বেশ কয়েকটি মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে মম ইন, হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, সেঞ্চুরি মোটেল এবং মোটেল ক্যাসেল উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন?

বগুড়ার জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে –

  • সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
  • মায়ের দোয়া হোটেল
  • অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট
  • চাপ কর্নার
  • হোটেল সাফিনা

এছাড়া, বগুড়ার বিখ্যাত দই অবশ্যই চেখে দেখতে ভুলবেন না।

বগুড়ার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পরশুরামের প্রাসাদ ছাড়াও বগুড়ার বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য –

  • মহাস্থানগড়
  • ভাসু বিহার
  • বিহার ধাপ
  • খেরুয়া মসজিদ
  • গোকুল মেধ
  • নবাব বাড়ী
  • রানী ভবানীর পিতৃালয়
  • ভীমের জাঙ্গাল

পরশুরামের প্রাসাদ ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান, যেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও কিংবদন্তির মিশেলে গঠিত এক অনন্য ঐতিহ্য দেখা যায়।

পরশুরামের প্রাসাদ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
166.84 কিমি
বগুড়া থেকে
11.4 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
মানকালীর কুণ্ড
মহাস্থানগড়
গোকুল মেধ
বিহার ধাপ
ভাসু বিহার
যোগীর ভবণ
ভীমের জাঙ্গাল
নান্দাইল দিঘী
হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ
আছরাঙ্গা দীঘি
খেরুয়া মসজিদ
ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক
সুরা মসজিদ
শিশু উদ্যান ও রিসোর্ট
পাহাড়পুর জাদুঘর
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
বার শিবালয় মন্দির
ডানা পার্ক
এসকেএস ইন রিসোর্ট
রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ী

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন