বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণকারী বীর সন্তান হামিদুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক সাহসী সিপাহী। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি সিলেটের শ্রীমঙ্গল এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

২৮ অক্টোবর সকালে, দলনায়কের নির্দেশে তিনি ধলই বিওপি-তে পাকবাহিনীর ঘাঁটি দখলে অভিযানে যান। সাহসের প্রতীক হিসেবে হালকা মেশিনগান নিয়ে একাই দুটি পাকিস্তানি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেন এবং শত্রুবাহিনীর অধিনায়কসহ অনেক সৈন্যকে পরাজিত করেন। তবে এই যুদ্ধে শত্রুর পাল্টা আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ হন। তার আত্মত্যাগের কয়েক দিনের মধ্যেই ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। সহযোদ্ধারা তার মৃতদেহ ভারতের আমবাসা গ্রামের একটি মসজিদের পাশে সমাহিত করেন।

দেহাবশেষের প্রত্যাবর্তন

২০০৫ সালে ভারতের ত্রিপুরার আমবাসা গ্রাম থেকে তার দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। পরে, ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে পূর্ণ মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তার অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

ধলই চা বাগানের স্মৃতিসৌধ ও ঝিনাইদহের নিজ গ্রামে শহীদ হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর এবং গ্রন্থাগার তার প্রতি জাতির শ্রদ্ধার নিদর্শন। প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর তার শাহাদাত বার্ষিকীতে মৌলভীবাজারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এবং দেশজুড়ে অসংখ্য দর্শনার্থী তার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

কিভাবে যাবেন

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধে যেতে হলে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আসতে হবে।

  • সড়কপথ: ঢাকার ফকিরাপুল বা সায়েদাবাদ থেকে হানিফ, শ্যামলী, এনা বা সিলেট পরিবহনের বাসে শ্রীমঙ্গল পৌঁছানো যায়।
  • রেলপথ: কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটগামী জয়ন্তিকা, উপবন, বা পারাবত এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়।
    শ্রীমঙ্গল থেকে স্থানীয় পরিবহনে (সিএনজি বা বাস) কমলগঞ্জ হয়ে হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধে পৌঁছানো সম্ভব।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।

  • বেশি মানের জন্য: গ্র্যান্ড সুলতান, রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট।
  • মাঝারি মানের জন্য: টি টাউন রেস্ট হাউজ, নিসর্গ ইকো রিসোর্ট, হোটেল প্লাজা।

কোথায় খাবেন

শ্রীমঙ্গলে খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ভালো রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

  • বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট: হোটেল সাতকড়া, কুটুম বাড়ী, গ্র্যান্ড তাজ, পানসী রেস্টুরেন্ট।
  • বিশেষ আকর্ষণ: নীল কণ্ঠ কেবিনের বিখ্যাত সাত রঙের চা।

সংক্ষেপে

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই ধারণ করে না, এটি পর্যটকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার স্থান। ইতিহাসের সাক্ষী এই স্থান ভ্রমণ আপনাকে গর্ব ও শ্রদ্ধায় অভিভূত করবে।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
150.41 কিমি
মৌলভীবাজার থেকে
30.53 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
মাধবপুর লেক
হামহাম জলপ্রপাত
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ
চা জাদুঘর
মণিপুরী পল্লী
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
বাইক্কা বিল
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য
হাইল হাওর
দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা
গ্রীনল্যান্ড পার্ক
পাথারিয়া পাহাড়
দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
পলো বাইছ উৎসব
শংকরপাশা শাহী মসজিদ

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন