মাধবপুর লেক (Madhabpur Lake) মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে। ১৯৬৫ সালে চা বাগানের টিলায় বাঁধ দিয়ে পানি সঞ্চয় করে এই লেক তৈরি করা হয়। মাধবপুর লেকের আয়তন প্রায় ৫০ একর, দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫০ থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত।
এই লেকটি ছোট-বড় পাহাড় এবং টিলার মধ্যে অবস্থিত, যেখানে রয়েছে সুদৃশ্য চা বাগান। মাধবপুর চা বাগান, যা ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন, এর ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত এবং লেকের সৌন্দর্য বাড়ায় সাদা এবং নীল পদ্ম ফুল। শীতকালে এখানে অনেক অতিথি পাখি আসে। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং চা বাগানের ব্যবস্থাপনার কারণে লেকটি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। মাধবপুর লেক ঘুরে হাতে সময় থাকলে, ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধও দেখা যেতে পারে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মাধবপুর লেকের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। মাধবপুর লেক দেখতে যেতে হলে প্রথমে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছাতে হবে। এরপর ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস অথবা সিএনজি রিকশায় কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা হয়ে মাধবপুর লেক যাওয়া যায়। এছাড়া, শ্রীমঙ্গল চা বাগানের কাছ থেকে সিএনজি ভাড়া করে মাধবপুর লেকে যাওয়া সম্ভব।
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে হানিফ পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্র্যাভেলস, শ্যামলী পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস চলাচল করে। এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৭০-৭০০ টাকা। এছাড়া, ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য পারাবত এক্সপ্রেস, কালিনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, অথবা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল আসা যেতে পারে। ট্রেনের টিকিটের দাম ২৭৫-৬২৭ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আকাশপথে ঢাকা থেকে সিলেট এসে সড়কপথে শ্রীমঙ্গলে যাওয়া সম্ভব।
কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে উচ্চমানের হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ (পাঁচ তারকা), রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট, টি টাউন রেস্ট হাউজ, টি রিসোর্ট, নিসর্গ ইকো রিসোর্ট, হোটেল প্লাজা। এই হোটেলগুলোতে বিভিন্ন সময় ডিসকাউন্টের সুযোগ থাকে, তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাড়ার বিষয়ে দরদাম করা যেতে পারে। এছাড়া, আরও কম খরচে শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য শহরে নানা মানের হোটেলও পাওয়া যাবে।
কোথায় খাবেন
মাধবপুর লেকের আশপাশে খাবারের বিশেষ ব্যবস্থা নেই, তাই প্রয়োজন হলে কিছু খাবার সাথে নিয়ে যেতে পারেন। শ্রীমঙ্গল শহরে ফিরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবারের সুযোগ রয়েছে, যেমন পানশী এবং পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট। এখানে ১৩০-৫০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যাবে।
ভ্রমণের সময় যেসব বিষয় মনে রাখবেন
- ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি জীববৈচিত্র্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
- শীতকাল ছাড়া অন্যান্য সময়ে জোঁক ও সাপের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
- কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে রিজার্ভ গাড়ি না নিয়ে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোডের লোকাল সিএনজি অথবা বাস ব্যবহার করতে পারেন।
মৌলভীবাজার জেলার আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
- হামহাম জলপ্রপাত
- লাউয়াছড়া উদ্যান
- চা বাগান
- মাধবকুণ্ড ঝর্ণা
- সাত রঙের চা – নীলকন্ঠ কেবিন
- বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!