সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

২০০৫ সালে প্রায় ২৪৩ হেক্টর জমি নিয়ে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় রঘুনন্দন পাহাড়ের ভেতর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। সাতটি পাহাড়ি ছড়া বা ঝর্ণা থেকে এই উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছে। আগে এটি ‘রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট’ নামে পরিচিত ছিল।

উদ্যানের জীববৈচিত্র্য

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ১৪৫ প্রজাতির বিভিন্ন গাছপালা। এছাড়া এখানে ৬ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং প্রায় ১৪৯ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। উদ্যানের উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে মেছোবাঘ, উল্লুক, লজ্জাবতী বানর, চশমা হনুমান এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। পাখিদের মধ্যে লাল মাথা ট্রগন, ধনেশ, ঈগল এবং ময়না উল্লেখযোগ্য। উদ্যানের চারপাশে রয়েছে চা বাগান, স্থানীয় গ্রাম ও ফসলি জমি, যা এখানকার মানুষদের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে দেখার জায়গাগুলো

পর্যটকদের জন্য বনের ভেতর তিনটি ট্রেইল তৈরি করা হয়েছে:

  • আধা ঘণ্টার ট্রেইল: ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্রেইল ধরে চললে টিপরাপাড়া নামের একমাত্র আদিবাসী গ্রামে পৌঁছানো যায়।
  • এক ঘণ্টার ট্রেইল: এই ট্রেইল উদ্যানের প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য দেখতে উপযুক্ত।
  • তিন ঘণ্টার ট্রেইল: ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্রেইল পাখিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ। এর শেষ প্রান্তে আগরের বন রয়েছে।

গাইডের সুবিধা

বনের ট্রেইল ঘুরতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে গাইড নেওয়া যাবে। বনে গভীরে প্রবেশ করলে অবশ্যই গাইড সঙ্গে নেওয়া উচিত।

ট্রি অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি

সম্প্রতি সাতছড়ি উদ্যানে গাছের ওপর অ্যাডভেঞ্চার করার সুযোগ চালু হয়েছে। জনপ্রতি খরচ ১০০ টাকা। বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন মোহাম্মদ হোসাইন (01856-576876)।

উদ্যানে প্রবেশের খরচ

  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: ১১৫ টাকা
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য: ৫৭ টাকা
  • বিদেশি পর্যটকদের জন্য: ১০ ডলার
  • বনভোজনের জন্য জনপ্রতি ২৩ টাকা
  • ছোট গাড়ি পার্কিং: ১১৫ টাকা, বড় গাড়ি পার্কিং: ২৩০ টাকা

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যাতায়াত

  • বাসে ঢাকা থেকে: সিলেটগামী যেকোনো বাসে মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া বা শায়েস্তাগঞ্জে নেমে সিএনজিতে সাতছড়ি পৌঁছানো যায়।
  • ট্রেনে ঢাকা থেকে: কমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি বা লোকাল পরিবহনে উদ্যানে যাওয়া যায়।
  • চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে: পাহাড়িকা বা উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে সিলেটগামী হয়ে শায়েস্তাগঞ্জে নামতে হবে।
  • শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সাতছড়ি: লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ২০ টাকা করে চুনারুঘাট হয়ে সাতছড়ি যাওয়া যাবে।

থাকার ব্যবস্থা

উদ্যানে থাকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে রেস্ট হাউজ বা ক্যাম্পিং করা যায়। হবিগঞ্জ শহরের হোটেল জামিল, হোটেল সোনারতরী এবং দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টেও থাকতে পারেন।

ভ্রমণ পরামর্শ

  • বনে প্রবেশের আগে মোবাইল নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জেনে নিন।
  • গাইড ছাড়া বনের গভীরে না যাওয়াই ভালো।
  • বন্যপ্রাণী বা উদ্যানের পরিবেশ বিরক্ত করবেন না।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • সন্ধ্যার আগে বনের বাইরে চলে আসুন।
  • বর্ষাকালে জোঁকের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
110.46 কিমি
সিলেট থেকে
96.42 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
গ্রীনল্যান্ড পার্ক
হরিপুর জমিদার বাড়ি
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য
শংকরপাশা শাহী মসজিদ
কালভৈরব মন্দির
পলো বাইছ উৎসব
মণিপুরী পল্লী
তিন গম্বুজ মসজিদ
দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট
কেল্লা শহীদ মাজার
হাইল হাওর
বাইক্কা বিল
আবি রিভার পার্ক
চা জাদুঘর
কুতুব শাহ মসজিদ, অষ্টগ্রাম
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ
অষ্টগ্রাম হাওর
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
মাধবপুর লেক

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন