সোনারগাঁও উপজেলার গোয়ালদি গ্রামে অবস্থিত গোয়ালদি মসজিদ একটি ঐতিহাসিক সুলতানি স্থাপনা, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। এই মসজিদটি সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে নির্মিত হয়। আলাউদ্দিন হোসেন শাহর শাসনামলে বাংলার শিল্প, শিক্ষা এবং সাহিত্যে অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ইতিহাস অনুসারে, ১৫১৯ সালে মোল্লা হিজাবর আকবর খান এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
গোয়ালদি মসজিদে পুরনো ভারতের পান্ডুয়া, গৌড়সহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনার মতো আরব্য শৈলীতে করা অলংকরণ দেখা যায়, যা এর দেয়াল এবং সিলিংয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। মসজিদের ছাদে একটি গম্বুজ এবং চারটি সুলতানি স্টাইলের টাওয়ার রয়েছে। মসজিদের আয়তন ৭.৯২ মিটার এবং দেয়ালের পুরুত্ব ১.৬১ মিটার। মসজিদের অভ্যন্তরে পাঁচটি খিলান পথ রয়েছে, এবং প্রধান প্রবেশপথের মাঝখানে কালো পাথরের কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
মসজিদটির টেরাকোটা নকশা সোনারগাঁওয়ের সুলতান গিয়াস উদ্দিন শাহর সমাধির নকশার সাথে বেশ মিল আছে। এর পুরু ইটের পৃষ্ঠে খোদাই করা টেরাকোটা অলংকরণগুলি মসজিদটির বিশেষত্ব বৃদ্ধি করেছে। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই ঐতিহাসিক মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
ভ্রমণ নির্দেশনা
সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগর, লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর এবং গোয়ালদি মসজিদ একে অপরের কাছে অবস্থিত। সুতরাং, এই তিনটি স্থান একসাথে পরিদর্শন করলে ভ্রমণটি আরো উপভোগ্য হবে। পানাম নগরে প্রবেশ করতে ২০ টাকা এবং জাদুঘরে প্রবেশের জন্য ৩০ টাকা টিকিট কাটতে হবে। জাদুঘর প্রতি বুধবার ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা গুলিস্তান থেকে এসি বাসে (দোয়েল, স্বদেশ, বোরাক) মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে ব্যাটারী চালিত অটো বা রিকশায় ১০ থেকে ৩০ টাকায় পানাম নগরে পৌঁছানো যাবে। গুলিস্তান থেকে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
পানাম নগরী থেকে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার, যা হাঁটার মাধ্যমে সহজে পৌঁছানো যায়। জাদুঘর থেকে রিকশায় ১৫-২০ টাকায় গোয়ালদি মসজিদে পৌঁছানো যাবে।
থাকার জায়গা ও খাবারের ব্যবস্থা
ঢাকা শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় সোনারগাঁও ভ্রমণের জন্য রাত কাটানোর প্রয়োজন নেই, তবে বিশেষ প্রয়োজনে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, সোনারগাঁওয়ের মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এবং জাদুঘর ১নং গেইট সংলগ্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টে থাকার এবং খাবারের সুবিধা পাওয়া যাবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!