যশোর রোডের নির্মাণের পেছনে এক ঐতিহাসিক কাহিনি রয়েছে। কালীগঞ্জের নলডাঙ্গার জমিদার কালী পোদ্দার এই সড়কটি নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, তাঁর মা যশোদা দেবী গঙ্গাস্নানের ব্রত গ্রহণ করেছিলেন এবং সড়কপথে যাতায়াতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে জমিদার কালী পোদ্দার যশোরের কালীগঞ্জ থেকে ভারতের কলকাতার কালীঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ এই রাস্তা নির্মাণ করেন।
রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হলেও যশোদা দেবী প্রচণ্ড রোদে ভ্রমণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তাই তাঁর পরামর্শে রাস্তার দুই পাশে ছায়াদানকারী রেন্ট্রি ও কড়ই গাছ রোপণ করা হয়। পরবর্তীতে যশোদা দেবীর নামানুসারে এই সড়কটি "যশোর রোড" নামে পরিচিতি লাভ করে। শতবর্ষী সেই গাছগুলো আজও যশোর রোডের সৌন্দর্য বাড়িয়ে চলেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজার হাজার শরণার্থী এই রাস্তার দুই পাশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের দুর্দশা দেখে মার্কিন কবি অ্যালান গিন্সবার্গ "সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড" নামে একটি কবিতা রচনা করেন। পরবর্তীতে ভারতীয় সংগীতশিল্পী মৌসুমি ভৌমিক এই কবিতার বাংলা অনুবাদ করে একটি গান তৈরি করেন।
যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে যশোর আসা যায়। যশোর থেকে বেনাপোলগামী ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটিই যশোর রোড নামে পরিচিত। যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত যাত্রাকালে পুরো রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
কোথায় থাকবেন
যশোর ও বেনাপোলে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলো হলো:
- হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল
- জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেল
- হোটেল আর.এস ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল শামস ইন্টারন্যাশনাল
কোথায় খাবেন
যশোরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না!
- জামতলার মিষ্টি
- খেজুরের গুড়ের প্যারা সন্দেশ
- ভিজা পিঠা
- ধর্মতলার মালাই চা
- চুকনগরের বিখ্যাত চুই ঝাল
এই ঐতিহাসিক যশোর রোড শুধু একটি রাস্তা নয়, বরং এটি বয়ে এনেছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। তাই এই পথে ঘুরে এসে এর প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!