সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলায় অবস্থিত সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কলারোয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার এবং সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে সোনাবাড়িয়া গ্রামে এই মন্দিরটি অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি ‘সোনাবাড়িয়া মঠ’ বা ‘শ্যামসুন্দর মন্দির’ নামেও পরিচিত। তবে মন্দিরের দেয়ালে খোদাই করা শিলালিপিতে এর নাম উল্লেখ আছে ‘শ্যামসুন্দর নবরত্ন মন্দির’ হিসেবে।
শুধু এই মন্দির নয়, গোটা সোনাবাড়িয়া এলাকাজুড়েই ছড়িয়ে আছে মধ্যযুগীয় নানা পুরাকীর্তি। প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে নির্মিত এই মন্দিরটি প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৬৭ সালে হরিরাম দাস বা দুর্গাপ্রিয় দাস নামের এক ব্যক্তি এই নবরত্ন মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরের সঙ্গে দুর্গা ও শিবেরও দুটি উপ-মন্দির রয়েছে।
এই মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলীতে রয়েছে তিনটি স্তর, যার প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন ধর্মীয় ও স্থাপত্যিক উপাদান দেখা যায়। নিচতলায় চারটি ভাগে বিভক্ত অভ্যন্তরীণ কাঠামো, যার চারপাশ ঘিরে রয়েছে প্রশস্ত অলিন্দ। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি মূল মন্ডপ, আর তৃতীয় তলায় দেখা যায় গম্বুজ আকৃতির কোঠা। পূর্ব পাশে একটি সিঁড়ি রয়েছে, যেটি দিয়ে উপরের অংশে যাওয়া যায়। ছাদের উপরে রয়েছে একাধিক ছোট-বড় গম্বুজ এবং একটি বৃহৎ রত্নাকৃতি গম্বুজ, যা একে নবরত্ন মন্দিরের স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
জনশ্রুতি অনুযায়ী, মহান সাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস একসময় এই মঠে প্রায় দুই মাস বাস করেছিলেন। এই কারণেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই মঠ বিশেষ পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক প্রতিবছর এই মন্দির পরিদর্শনে আসলেও, মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ এখনও প্রয়োজন অনুযায়ী হচ্ছে না।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা:
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার দূরত্ব প্রায় ২৬৭ কিলোমিটার। গাবতলী, নবীনগর, কল্যাণপুর, সাভার এবং শ্যামলী থেকে সরাসরি সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে এসি ও নন-এসি বাস চলে। যেসব পরিবহন এখানে চলাচল করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
এসপি গোল্ডেন লাইন, এ কে ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইন, মামুন এন্টারপ্রাইজ, ঈগল পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস এবং শ্যামলী পরিবহন।
ভাড়ার পরিমাণ বাসের মান অনুযায়ী ৬৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
সাতক্ষীরা থেকে সোনাবাড়িয়া:
সাতক্ষীরা সদর থেকে বাসযোগে কলারোয়া পৌঁছে, সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে সহজেই সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দিরে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
সাতক্ষীরা শহরে পর্যটকদের জন্য বেশকিছু মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। যেসব হোটেলে ভালো সেবা পাওয়া যায়:
হোটেল সংগ্রাম, হোটেল সম্রাট, হোটেল সীমান্ত, মোজাফ্ফর গার্ডেন, হোটেল মোহনা, এবং হোটেল উত্তরা।
কোথায় খাবেন?
সাতক্ষীরা তার কুল, আম, ওল, দেশি মাছ এবং সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধুর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া ‘সাতক্ষীরা ঘোষ ডেইরি’র সন্দেশ একবার চেখে দেখতেই হবে — এর স্বাদ দীর্ঘদিন মনে থাকবে!
আশপাশে দর্শনীয় স্থান
সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির দর্শনের পাশাপাশি সাতক্ষীরায় আরও কিছু চমৎকার দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সময় থাকলে দেখে আসতে পারেন:
- সুন্দরবন
- জোড়া শিবমন্দির
- মন্টু মিয়ার বাগান বাড়ী
- দেবহাটার বনবিবির বটগাছ
- নলতা শরীফ
- জাহাজমারী এলাকা
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!