পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার উত্তরপ্রান্তে বুড়িরচর গ্রামের আকন বাড়িতে অবস্থিত কাঠের কারুকার্যখচিত মমিন মসজিদ (Momin Masjid) একটি অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলোর মধ্যে এটি ২৩তম এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি মুসলিম স্থাপত্যকর্ম।
১৯১৩ সালে মৌলভী মমিন উদ্দিন আকন, স্বরূপকাঠি থেকে আনা ২১ জন দক্ষ কারিগরের সহায়তায় নিজ বাড়িতে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। লোহাকাঠ ও বার্মা সেগুন কাঠের উপর প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার করে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়ালের কাঠের কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইসলামিক সংস্কৃতি, ক্যালিগ্রাফি, বিভিন্ন ফুল, পাতা ও ফলের মনোমুগ্ধকর নকশা। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ১৯২০ সালে ইন্দো-পারসিক ও ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
মসজিদের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
টিনশেড চৌচালা বিশিষ্ট এই মসজিদটি ২৪ ফুট লম্বা ও ১৮ ফুট প্রশস্ত। মসজিদের চারপাশের বেড়া তিনটি ভাগে বিভক্ত। এখানে মোট ১২টি জানালা রয়েছে, যার মধ্যে উত্তর-দক্ষিণে ২টি এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৪টি করে জানালা রয়েছে। মসজিদের প্রধান আকর্ষণ এর কারুকার্যখচিত প্রবেশদ্বার ও মেহরাব, যেখানে অসাধারণ ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারের বাম পাশে আরবি অক্ষরে ইসলামের চার খলিফার নাম এবং মাঝখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নাম অলংকৃত করা হয়েছে।
মসজিদের অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এর নির্মাণে কোনো লোহা বা তারকাটা ব্যবহার করা হয়নি। মমিন আকনের নাতি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ মসজিদের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব তুলে ধরে “মমিন মসজিদ: স্মৃতি বিস্মৃতির খাতা” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এর ফলে ২০০৩ সালে এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে মসজিদের সংস্কার কাজ করা হয়, যেখানে কিছু লোহার ব্যবহার করে মূল নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সড়ক ও নৌপথে পিরোজপুর যাওয়া যায়।
- সড়কপথ:
গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে সাকুরা, ঈগল, দোলা, হামিম ও বনফুল পরিবহনের বাসে পদ্মা নদী পার হয়ে পিরোজপুর পৌঁছানো যায়। - নৌপথ:
সদরঘাট থেকে রাজদূত, আচল, হিমাচল ও পারাবত লঞ্চে পিরোজপুরের হুলারহাট ঘাটে নামতে হবে।
সেখান থেকে স্থানীয় যানবাহনে মঠবাড়িয়া পৌঁছে, প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মমিন মসজিদে যেতে পারবেন। মঠবাড়ীয়ার টিএন্ডটি রোড হয়ে তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অগ্রসর হলেই মসজিদটি দেখা যাবে।
বরিশাল থেকেও সহজে মঠবাড়িয়ায় পৌঁছানো যায়। বরিশাল শহরের রুপাতলি বাসস্ট্যান্ড থেকে মঠবাড়িয়াগামী বাসে তুষখালি নেমে, রিকশায় মসজিদে পৌঁছানো যাবে। এছাড়া ঢাকা সদরঘাট থেকেও তুষখালীর উদ্দেশ্যে লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে।
কোথায় থাকবেন?
রাত্রিযাপনের জন্য মঠবাড়িয়ায় হোটেল কুটুম বাড়ি ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে। এছাড়া পিরোজপুর শহরে হোটেল রজনী, হোটেল নিরালা, হোটেল রিল্যাক্স, পদ্মা হোটেল ও হোটেল ছায়ানীড়-এ থাকতে পারেন।
কোথায় খাবেন?
মঠবাড়িয়ায় গাজী হোটেল, ক্যাফে আড্ডা, আফজাল হোটেল, মোঘল ও রাজবাড়িয়া সহ বেশ কিছু ভালো মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে।
সুযোগ হলে পিরোজপুরের দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা ও রসমালাই এবং ঋতুপর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসমঞ্জুরি অবশ্যই চেখে দেখতে পারেন!
পিরোজপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
মমিন মসজিদ ছাড়াও পিরোজপুর জেলায় ঘুরে দেখতে পারেন—
✅ হরিণপালা রিভার ভিউ ইকোপার্ক
✅ ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক
✅ ডিসি পার্ক
✅ রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!