ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় দাঁড়িয়ে আছে এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো হরিপুর রাজবাড়ি (Haripur Rajbari)। ১৮৯৩ সালে রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী এই জমিদার বাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে তার পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়।
ইতিহাসের পাতায় হরিপুর রাজবাড়ি
প্রচলিত কাহিনীতে জানা যায়, ১৪০০ সালের দিকে ঘন শ্যাম কুণ্ড নামে এক ব্যবসায়ী এন্ডি কাপড়ের ব্যবসার উদ্দেশ্যে হরিপুরে আসেন। সে সময় মেহেরুন্নেসা নামে এক মুসলিম বিধবা এই অঞ্চলের জমিদারি পরিচালনা করতেন। খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় নিলামে ওঠা কিছু জমি ঘন শ্যাম কুণ্ড কিনে নেন। তারই উত্তরসূরি জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ১৯ শতকের শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। জনকল্যাণমূলক কাজে অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে "রাজর্ষি" উপাধিতে ভূষিত করেন।
স্থাপত্য ও আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য
রাজবাড়িটির নির্মাণশৈলীতে লতা-পাতার কারুকার্য খচিত দ্বি-তলা ভবনের পূর্ব দেয়ালে রয়েছে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চোদ্দটি আবক্ষ মূর্তি। পাশেই দেখা মেলে ৪০০ বছরের পুরনো টেরাকোটার শিব ও নাট মন্দির। ১৯০০ সালের দিকে জমিদার পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিভক্তির কারণে রাজবাড়িটি বড় তরফ ও ছোট তরফ নামে দুটি অংশে ভাগ হয়ে যায়। বর্তমানে পরিত্যক্ত এই স্থাপনাটির বিভিন্ন অংশ স্থানীয় সংগঠন ও সরকারি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও যেতে বাস ও ট্রেন — উভয় পথই রয়েছে। কর্ণফুলি, হানিফ, নাবিল, বাবলু ও কেয়া পরিবহনের বাসে যেতে সময় লাগবে ৮-১০ ঘণ্টা, ভাড়া ৮০০-১৮০০ টাকা। ট্রেনে গেলে কমলাপুর থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে চড়তে পারেন। ট্রেনের ভাড়া ৬৫০-২২৩৭ টাকা, নির্ভর করবে ক্লাসের ওপর। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বাস বা অটোরিকশায় সহজেই হরিপুর রাজবাড়িতে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন
ঠাকুরগাঁও শহরের নর্থ সার্কুলার রোডে হোটেল সালাম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শাহ্ জালাল ও হোটেল সাদেক — এসব হোটেলে থাকা যায়। এছাড়া সরকারি সার্কিট হাউজ ও জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজেও থাকতে পারেন।
খাবারের ব্যবস্থা
হরিপুরের আটঘারিয়া বাজার ও পাঁচঘরিয়া বাজারে স্থানীয় খাবার ও নাস্তার জন্য ছোটখাটো দোকান রয়েছে।
আশপাশের দর্শনীয় স্থান
হরিপুর রাজবাড়ির পাশাপাশি ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুরে দেখতে পারেন — জামালপুর জমিদার বাড়ি, লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘর, বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ, বালিয়া মসজিদ ও রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি।
এভাবেই ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলিয়ে হরিপুর রাজবাড়ি হয়ে উঠতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণ গন্তব্য।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!