ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর তীরে অবস্থিত রাজা টংকনাথের ঐতিহাসিক রাজবাড়ি। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এবং রানীশংকৈল উপজেলা থেকে মাত্র ১.৩ কিলোমিটার দূরত্বে এই রাজবাড়িটি দেখতে পাবেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী, রাজা টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ চৌধুরী ছিলেন মৈথিলি ব্রাহ্মণ, যিনি কাতিহারের এক গোয়ালা জমিদারের মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। জমিদার নিঃসন্তান অবস্থায় কাশীতে গমন করলে, তাম্রলিপিতে লিখিত দলিল অনুযায়ী বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারি লাভ করেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রায় ১০ একর জমির উপর রাজবাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা পরবর্তীতে রাজা টংকনাথের হাত ধরে সম্পন্ন হয়। ১৯২৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে চৌধুরী উপাধি দেন এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায়ের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন।
বর্তমানে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এই রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে সিংহদরজার চূড়ায় দিকনির্দেশক লৌহদণ্ডে "S.N.E.W" খোদাই করা রয়েছে। রাজবাড়ির আশেপাশে কাছারিবাড়ি, দুটি পুকুর এবং প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত রামচন্দ্র (জয়কালী) মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরটি রাজবাড়ির চেয়েও প্রাচীন, তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কীভাবে যাবেন
- বাসে: ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওগামী বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন কর্ণফুলী পরিবহন (📞 01674-805164), হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, এনা, বাবলু এন্টারপ্রাইজ ও কেয়া পরিবহন। নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১০০০-১৬০০ টাকা।
- ট্রেনে: কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে ঠাকুরগাঁও যেতে পারেন। ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৬৯৫ থেকে ২,৪৪৮ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ঠাকুরগাঁও পৌঁছে বাস বা সিএনজিতে রানীশংকৈল বাসস্ট্যান্ডে নেমে ভ্যান বা মোটরসাইকেলে বাচোর ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবনের পাশে রাজবাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যাবে।
কোথায় থাকবেন
ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কিছু সরকারি ডাকবাংলো ও রেস্ট হাউস রয়েছে, যেখানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারবেন। এছাড়া হোটেল সালাম ইন্টারন্যাশনাল, প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শাহ্ জালাল, হোটেল সাদেকের মতো আবাসিক হোটেলও পাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
রানীশংকৈলে মৌচাক রেস্টুরেন্টে স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া সাধারণ মানের হোটেল ও রেস্তোরাঁয় প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর ঠাকুরগাঁও গেলে অবশ্যই বিখ্যাত সূর্যপুরী আমের স্বাদ নিতে ভুলবেন না!
এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘুরে দেখে রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির সমৃদ্ধ অতীতের ছোঁয়া পাবেন, যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!