বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারি সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে রয়েছে একটি ব্যতিক্রমী প্রাচীন আমগাছ, যা দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমায় অসংখ্য মানুষ। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই বিশাল আমগাছটি স্থানীয়দের কাছে "বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ" নামে পরিচিত। এটি প্রায় ২.৫ বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত, যা এশিয়ার বৃহত্তম আমগাছ হিসেবে স্বীকৃত।

গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮০-৯০ ফুট, আর এর কাণ্ডের পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট। তিন দিক থেকে বের হওয়া ১৯টি বিশাল ডালপালা দেখে দূর থেকে মনে হবে যেন একেকটি আলাদা আমগাছ। যদিও কেউ সঠিকভাবে গাছটির রোপণের সময় জানাতে পারেন না, তবে ধারণা করা হয় এটি দুই শতাব্দীরও বেশি পুরোনো। এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ গাছটি দেখতে আসে।

ঐতিহ্য ও রক্ষণাবেক্ষণ

গাছটির বর্তমান মালিক নূর ইসলাম ও সাইদুর ইসলাম, যাদের পূর্বপুরুষরা গাছটি লাগিয়েছিলেন। প্রতি বছর গাছটিতে প্রচুর আম ধরে, প্রতিটির ওজন গড়ে ২০০-২৫০ গ্রাম। এই আমের স্বাদ ও আকারের জন্য স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা এবং দাম দুটোই বেশি। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও গাছের সুরক্ষার জন্য চারপাশে টিনের বেড়া দেওয়া হয়েছে, আর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৫ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন। গাছটি কাছ থেকে দেখতে জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও পৌঁছাতে কর্ণফুলী, হানিফ, নাবিল, কেয়া বা বাবলু পরিবহনের বাসে যাওয়া যায়। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৮০০-১৮০০ টাকা। এছাড়া, পঞ্চগড়গামী ট্রেনে ঠাকুরগাঁও নেমে সেখান থেকে বালিয়াডাঙ্গী যেতে পারবেন, যা প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। বালিয়াডাঙ্গী থেকে স্থানীয় যানবাহনে আরও ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই হরিণমারীর মন্ডুমালা গ্রামে পৌঁছে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন?

ঠাকুরগাঁও শহরে থাকা-খাওয়ার জন্য বেশ কিছু হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। যেমন, হোটেল সালাম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শাহ্ জালাল ও হোটেল সাদেক। সরকারি সার্কিট হাউজ ও জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজেও থাকার ব্যবস্থা করা যায়।

কোথায় খাবেন?

ঠাকুরগাঁও ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় কিছু স্থানীয় রেস্তোরাঁতে মাঝারি মানের খাবার পাওয়া যায়। শহরে মুন্সির হোটেল, উজ্জ্বল হোটেল, নিরিবিলি হোটেল, বাবুর হোটেল, আনসারি হোটেলসহ আরও বেশ কিছু লোকাল রেস্টুরেন্টে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। বিশেষ করে, "সিদল ভর্তা" আর চালের গুঁড়ো দিয়ে বানানো বিভিন্ন পিঠা ঠাকুরগাঁওয়ের জনপ্রিয় খাবার।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ দেখতে গেলে ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানও ঘুরে দেখতে পারেন। যেমন, ঐতিহাসিক বালিয়া মসজিদ, ফান সিটি শিশু পার্ক, কিংবা রাজা টংকনাথের রাজবাড়ী।

এমন ব্যতিক্রমী একটি আমগাছের গল্প জানলে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়, তাই পরিকল্পনা করে বেরিয়ে পড়তে পারেন প্রকৃতির এই অনন্য বিস্ময় দেখতে!

বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
339.28 কিমি
ঠাকুরগাঁও থেকে
25.06 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
হরিণমারী শিব মন্দির
জগদল রাজবাড়ি
জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ
লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘর
মির্জাপুর শাহী মসজিদ
বার আউলিয়া মাজার
রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি
বালিয়া মসজিদ
ফানসিটি শিশু পার্ক
রকস মিউজিয়াম
চা বাগান
হরিপুর রাজবাড়ি
তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো
তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা
ভিতরগড় দুর্গ নগরী
মহারাজার দিঘী

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন