আমিয়াখুম জলপ্রপাত

বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার এক লুকিয়ে থাকা রত্ন হল আমিয়াখুম জলপ্রপাত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম দুর্গম ও মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা, যেখানে পাহাড়ের বুক চিরে দুধসাদা জলরাশি গর্জন করে নিচে নেমে আসে। পাহাড়ের সবুজ গহিন আর পাথুরে পথ পেরিয়ে যখন জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়াবেন, তখন এর সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা এই ঝর্ণাকে অনেকে ভালোবেসে বলেন "বাংলার ভূস্বর্গ"। কেউ কেউ আবার এটিকে দেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত বলেও আখ্যা দেন।

আমিয়াখুমে কখন যাবেন?

আমিয়াখুম বছরের প্রায় সব সময়ই ঘুরতে যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে ঝর্ণার রূপ সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে। কিন্তু এই সময় সাঙ্গু নদীতে পানি বেড়ে যায় এবং ফ্ল্যাশ ফ্লাডের ঝুঁকি থাকে, তাই সতর্ক থাকতে হবে। নিরাপদে ট্রেকিং করতে চাইলে শীতকাল উপযুক্ত, কারণ তখন পথ পেরোনো অপেক্ষাকৃত সহজ হয়।

আমিয়াখুম যাওয়ার পথ

প্রথমে বান্দরবান শহর গিয়ে সেখান থেকে থানচি উপজেলা পৌঁছাতে হবে। থানচি থেকে দুটি রুটে আমিয়াখুম যাওয়া যায়:

🔸 রুট ১: থানচি > পদ্মঝিরি > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম
🔸 রুট ২: থানচি > রেমাক্রি > নাফাখুম > জিনাপাড়া > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম

প্রথম রুটে ৬-৭ ঘণ্টার ট্রেকিং করতে হয়, কখনও রাতেও হাঁটতে হতে পারে। তুলনায় দ্বিতীয় রুট সহজ এবং বেশি জনপ্রিয়। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম, জিনাপাড়া হয়ে থুইসাপাড়ায় রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে আমিয়াখুমের পথে রওনা দেওয়া ভালো।

যাত্রাপথের সময়সীমা:

  • বান্দরবান → থানচি: বাস বা জীপে ৪-৫ ঘণ্টা
  • থানচি → রেমাক্রি (নৌকা): ২-৩ ঘণ্টা
  • রেমাক্রি → নাফাখুম: ২-২.৫ ঘণ্টা ট্রেকিং
  • নাফাখুম → থুইসাপাড়া: ৩-৪ ঘণ্টা ট্রেকিং
  • থুইসাপাড়া → আমিয়াখুম: ৩-৩.৫ ঘণ্টা ট্রেকিং

গাইড আবশ্যক: থানচি থেকে গাইড ছাড়া আমিয়াখুমে যাওয়া নিষেধ। থানচিতে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে একজন অভিজ্ঞ গাইড নিয়ে বের হতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা

থানচি পার হলে স্থানীয় আদিবাসী গ্রামগুলোতেই রাত কাটাতে হবে। সাধারণত রেমাক্রি, নাফাখুম, জিনাপাড়া, থুইসাপাড়া — এসব পাড়ায় থাকতে পারেন। গাইড থাকার ব্যবস্থা করে দেবে।

খাবার ব্যবস্থা

খাবারও আদিবাসীদের ঘরেই পাবেন। জুম চালের ভাত, পাহাড়ি মুরগি, শাক-সবজি, আলুভর্তা — এরকম খাবার পাওয়া যায়। তবে সঙ্গে শুকনো খাবার (বিস্কুট, চকলেট, চিড়া, খেজুর) নেওয়া ভালো।

ভ্রমণ খরচ (প্রতি জন, আনুমানিক):

  • বান্দরবান → থানচি (জীপ/বাস): ২০০-৬০০০ টাকা
  • থানচি → রেমাক্রি (নৌকা): ৪০০০-৪৫০০ টাকা (৫-৬ জনের জন্য)
  • গাইড ফি: ৪৫০০-৫০০০ টাকা
  • থাকা: প্রতি রাত ১৫০ টাকা
  • খাবার: প্রতি বেলা ১২০-১৫০ টাকা

ভ্রমণ পরামর্শ

  • গ্রুপে ঘুরতে যান: এতে খরচ কমবে এবং দলীয় মনোবল বাড়বে।
  • ট্রেকিং গিয়ার নিন: ভালো মানের ট্রেকিং জুতা, ব্যাকপ্যাক, হালকা জামাকাপড় নিন।
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ: ফার্স্ট এইড কিট, স্যালাইন, গ্লুকোজ সঙ্গে রাখুন।
  • নেটওয়ার্ক সমস্যা: থানচি পেরোলেই মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাবে। আগে দরকারি ফোন কল সেরে নিন।
  • অনুমতি ও আইডি: থানচিতে প্রশাসনের অনুমতি নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্টুডেন্ট আইডি লাগবে।

সতর্কতা ও আচরণবিধি

  • শিশু ও বৃদ্ধদের আমিয়াখুম যাত্রা এড়িয়ে চলা ভালো
  • গাইডের নির্দেশ মেনে চলুন: গাইডই আপনার সবচেয়ে বড় সহায়তা।
  • স্থানীয় আদিবাসীদের প্রতি সম্মান দেখান: তাঁদের সংস্কৃতি ও জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
  • প্রকৃতির প্রতি যত্নবান হোন: প্লাস্টিক, পলিথিন ফেলা বা প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন।

শেষ কথা

আমিয়াখুম ভ্রমণ শুধু একটি ট্রিপ নয়, এটি প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংযোগের অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, পাহাড়ের চ্যালেঞ্জ, ঝর্ণার শীতল পরশ — সব মিলিয়ে এটি জীবনের এক অনন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে। তবে, সেই স্মৃতি যাতে প্রকৃতিকে আঘাত না করে, তা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। তাই ভ্রমণ করুন দায়িত্বশীলভাবে, নিজে উপভোগ করুন আর প্রকৃতিকে ভালোবাসুন!

আমিয়াখুম জলপ্রপাত এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
314.83 কিমি
বান্দরবান থেকে
57.94 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
সাতভাইখুম
নাফাখুম
তিন্দু
ডিম পাহাড়
জাদিপাই ঝর্ণা
কেওক্রাডং
দামতুয়া ঝর্ণা
চিংড়ি ঝর্ণা
বগালেক
আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ
ঋজুক ঝর্ণা
মারায়ন তং
খাঞ্জেলী দীঘি
চিম্বুক
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
সাইরু হিল রিসোর্ট
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন