নাফাখুম

নাফাখুম জলপ্রপাত বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এবং রহস্যময় প্রাকৃতিক স্থান, যা বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত। জলপ্রপাতটির প্রবল জলপ্রবাহ এবং অসাধারণ সৌন্দর্যের কারণে একে অনেকেই "বাংলার নায়াগ্রা" বলে অভিহিত করেন।

থানচি বাজার থেকে সাঙ্গু নদী ধরে নৌকায় রেমাক্রি যেতে হয়, আর সেখান থেকে তিন ঘণ্টা হাঁটলেই পৌঁছানো যায় নাফাখুমের অপরূপ দৃশ্যের কাছে। রেমাক্রি খালের স্রোত এখানে ২৫-৩০ ফুট নিচে নেমে গিয়ে সৃষ্টি করেছে এই অনন্য জলপ্রপাত। বয়ে চলা পানির কুয়াশায় সূর্যের আলো পড়ে তৈরি হয় রঙধনুর খেলা, যা যেকোনো ভ্রমণপিপাসু মনকে মুগ্ধ করবে।

যদি আপনি ট্রেকিং আর অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, বান্দরবানের সবুজের রাজ্য, আদিবাসী সংস্কৃতি, সাঙ্গুর রুদ্র রূপ বা শীতের স্বচ্ছ জলধারা দেখতে চান — তাহলে একবার নাফাখুম ভ্রমণ করতেই হবে!

নাফাখুম ভ্রমণের সেরা সময়

সারা বছরই ভ্রমণপিয়াসীরা নাফাখুম ছুটে যান, তবে বর্ষার সময় সাঙ্গু নদীর প্রবাহ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তাই প্রশাসনের অনুমতি না-ও পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে, শীতে জলপ্রপাতের পানির পরিমাণ কমে যায়। তাই সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, বর্ষার পরের সময়টুকু নাফাখুম দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

কিভাবে যাবেন নাফাখুম?

প্রথমে বান্দরবান শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে এস. আলম, ইউনিক, সেন্টমার্টিন, হানিফ, শ্যামলী ইত্যাদি বাসে সরাসরি বান্দরবান পৌঁছাতে পারবেন। নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা, আর এসি বাসের ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা। চাইলে ট্রেনে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বান্দরবানও যেতে পারেন।

বান্দরবান থেকে থানচি:
বান্দরবান থেকে থানচি যেতে লোকাল বাসে জনপ্রতি ২০০ টাকা লাগে, সময় লাগে ৪-৫ ঘণ্টা। চাইলে রিজার্ভ জীপে গেলে খরচ পড়বে ৫,৫০০-৬,০০০ টাকা, আর সময় লাগবে ৩-৩.৫ ঘণ্টা।

থানচি থেকে রেমাক্রি:
থানচিতে পৌঁছানোর পর একজন স্থানীয় গাইড নিতে হবে, যার ফি ১৫০০ টাকা। তারপর থানচি বিজিবি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে নৌকায় রেমাক্রি বাজার যেতে হবে। ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকার ভাড়া (যাওয়া-আসা) ৪,০০০-৫,০০০ টাকা, যা ৪-৫ জনের জন্য আদর্শ। পথে পদ্মমুখ, তিন্দু, রাজাপাথর, রেমাক্রি ফলসের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুম:
রেমাক্রি বাজারে রাতে থেকে সকালে স্থানীয় গাইড (ফি ৫০০ টাকা) নিয়ে ২-৩ ঘণ্টা হেঁটে পৌঁছাতে হবে নাফাখুমে। বর্ষায় খালের পানি বেশি থাকলে সময় একটু বেশি লাগতে পারে, তবে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে। পথের চারপাশের পাহাড় আর ঝরনার শব্দ আপনাকে এক স্বপ্নিল অনুভূতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে!

থাকার ব্যবস্থা:

  • থানচি: বিজিবি পরিচালিত সীমান্ত অবকাশ (১৫০০-৩০০০ টাকা), স্থানীয় কটেজ (২০০-১০০০ টাকা)।
  • রেমাক্রি: আদিবাসী ঘরে জনপ্রতি ১৫০ টাকা।

খাবার:
থানচি ও রেমাক্রিতে স্থানীয় হোটেলে সাধারণ খাবারের ব্যবস্থা আছে। জনপ্রতি খাবারের খরচ ৮০-১২০ টাকা।

নাফাখুম ট্যুর প্ল্যান (১ রাত ২ দিন)

  • দিন ১: বান্দরবান → থানচি → রেমাক্রি (রাত যাপন)।
  • দিন ২: রেমাক্রি → নাফাখুম → রেমাক্রি → থানচি → বান্দরবান → ঢাকা।

খরচের ধারণা (প্রতি ব্যক্তি, ৪ জনের দল):

  • ঢাকা-বান্দরবান (নন-এসি বাস): ১৬০০ টাকা (আসা-যাওয়া)।
  • বান্দরবান-থানচি (লোকাল বাস): ৫০০ টাকা।
  • নৌকা ভাড়া: ১,০০০ টাকা।
  • গাইড ফি: ৫০০ টাকা।
  • খাবার ও থাকা: ৭০০-৮০০ টাকা।
    মোট: ৪,৩০০-৪,৫০০ টাকা (প্রায়)।

ভ্রমণের সতর্কতা:

  • লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন, বিশেষ করে বর্ষায়।
  • ভালো গ্রিপযুক্ত ট্রেকিং জুতা পরুন।
  • নাফাখুমের পাথুরে এলাকা পিচ্ছিল, সাবধানে চলুন।
  • ট্রেকিংয়ের জন্য বাঁশের লাঠি ও ফার্স্ট এইড কিট রাখুন।
  • পানির বোতল ও শুকনা খাবার সাথে রাখুন।
  • পরিবেশের ক্ষতি করবেন না, ময়লা-আবর্জনা ফেলার সময় সতর্ক থাকুন।

যা দেখবেন:

  • চিম্বুক, নীলগিরি, সাঙ্গু নদী, পদ্মমুখ, তিন্দু, রাজাপাথর, রেমাক্রি ফলস।
  • আশেপাশে: আমিয়াখুম, ডিম পাহাড়, বগালেক, কেওক্রাডং, নীলাচল, স্বর্ণমন্দির।

নাফাখুমের মতো জায়গা খুব কমই আছে, যেখানে প্রকৃতি এতটা কাছ থেকে অনুভব করা যায়। তাই ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এই অদ্ভুত সুন্দর জলপ্রপাতের পথে! ✨

আপনি চাইলে এই কনটেন্ট আরও কাস্টমাইজ করতে পারেন। বলুন, কিছু যোগ বা পরিবর্তন করতে চান কি?

নাফাখুম এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
318.35 কিমি
বান্দরবান থেকে
62.29 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
তিন্দু
আমিয়াখুম জলপ্রপাত
সাতভাইখুম
ডিম পাহাড়
দামতুয়া ঝর্ণা
আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ
জাদিপাই ঝর্ণা
কেওক্রাডং
চিংড়ি ঝর্ণা
বগালেক
মারায়ন তং
ঋজুক ঝর্ণা
খাঞ্জেলী দীঘি
চিম্বুক
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন