তিন্দু

তিন্দু, বান্দরবানের থানচি উপজেলায় অবস্থিত এক স্বর্গীয় স্থান। পাহাড়, মেঘ, ঝর্ণা আর সাঙ্গু নদীর স্বচ্ছ জলের মেলবন্ধনে তৈরি এই জায়গা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। শক্ত পাথরের বুক চিরে প্রবাহিত সাঙ্গুর জলধারা, পাহাড়গলা পানিতে মাছের সাথে সময় কাটানো, আর স্থানীয় আদিবাসীদের আন্তরিক আতিথেয়তা — সব মিলিয়ে তিন্দুতে একবার গেলে ফিরে আসতে ইচ্ছা করবে না!

ভোরে পাহাড়ে মেঘের খেলা আর সন্ধ্যায় মেঘের চাদরে ঢাকা প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সময়ের হিসেব ভুলে পাহাড়ি পথে হারিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে।

এডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে চাইলে

তিন্দু শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং অ্যাডভেঞ্চারের জন্যও বিখ্যাত। যারা রোমাঞ্চ ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ জায়গা। নাফাখুম ঝর্ণা দেখতে গেলে পথে তিন্দু ঘুরে যেতে পারেন, চাইলে থাকতে পারেন রাতভর।

কখন যাবেন?

তিন্দুতে বছরের যে কোনো সময়ই যাওয়া যায়। তবে সময় অনুযায়ী রূপ বদলায় প্রকৃতি:

  • বর্ষাকালে: উত্তাল সাঙ্গু, জোরালো স্রোত আর ঘন মেঘ।
  • শীতকালে: কুয়াশায় মোড়া পাহাড় আর শান্ত সাঙ্গুর জলধারা।

প্রকৃতির প্রতিটি ঋতুতেই তিন্দু আপনাকে নতুন রূপে স্বাগত জানাবে।

যাত্রাপথ: কিভাবে যাবেন তিন্দু?

ঢাকা থেকে বান্দরবান

ঢাকার কলাবাগান, সায়েদাবাদ, গাবতলী বা ফকিরাপুল থেকে শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাসে সহজেই বান্দরবান যেতে পারেন। ভাড়া ৮০০-১৮০০ টাকা (নন-এসি/এসি)।
বিকল্প: ট্রেনে চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান যেতে পারেন।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান

বদ্দারহাট বা ধামপাড়া বাস স্টেশন থেকে পূবালী/পূর্বানী বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়ায় বান্দরবান পৌঁছানো যায়। মাইক্রোবাস রিজার্ভ করলে ভাড়া ২,৫০০-৩,৫০০ টাকা

বান্দরবান থেকে থানচি

  • লোকাল বাস: জনপ্রতি ২০০ টাকা, সময় ৪-৫ ঘণ্টা
  • রিজার্ভ জীপ: ৫,৫০০-৬,০০০ টাকা, সময় ৩-৩.৫ ঘণ্টা
    পথে মিলনছড়ি, চিম্বুক, নীলগিরি — প্রতিটি জায়গায় প্রকৃতি আপনাকে থামতে বাধ্য করবে!

থানচি থেকে তিন্দু

থানচি পৌঁছেই গাইড ঠিক করতে হবে (গাইড ফি ৮০০-১,৫০০ টাকা)। বিজিবি ক্যাম্প/থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। এরপর ইঞ্জিন নৌকায় সাঙ্গু ধরে ২-২.৫ ঘণ্টা'র নৌযাত্রায় পৌঁছে যাবেন তিন্দুতে। নৌকা রিজার্ভ ভাড়া ৩,০০০-৩,৫০০ টাকা (রাত থাকলে), না থাকলে ২,০০০-২,২০০ টাকা

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

তিন্দুতে থাকবেন স্থানীয় আদিবাসীদের বাঁশ-কাঠের মাচাং ঘরে বা ইউনিয়ন পরিষদের বাংলোতে

  • থাকার খরচ: জনপ্রতি ১৫০ টাকা/দিন
  • খাবার: ১০০-১৫০ টাকা/বেলা (তাজা মাছ, পাহাড়ি মুরগি, ডাল, আলুভর্তা)।
    চাইলেই থানচি থেকে বাজার করে নিয়ে নিজে রান্না করতে পারেন। ইচ্ছা হলে তাবু নিয়ে ক্যাম্পিং করেও কাটাতে পারেন রাত!

আশেপাশে ঘুরে দেখবেন যা

  • কুমারী ঝর্ণা: তিন্দু বাজার থেকে ১০-২০ মিনিট হাঁটা।
  • বড় পাথর এলাকা: নদীর উজানে বিশাল পাথরের সমারোহ, যা আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে।
  • রেমাক্রি: বড় পাথর এলাকা পার হয়ে ১ ঘণ্টা নৌপথ দূরত্বে।

ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস

  • থানচি থেকে অনুমতি ছাড়া তিন্দু যাওয়া যাবে না, আইডি কার্ড/ফটোকপি রাখুন।
  • লাইফ জ্যাকেট রাখুন (বিশেষত বর্ষাকালে)।
  • মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল, রবি/এয়ারটেল কিছু জায়গায় কাজ করে।
  • সোলার বিদ্যুৎ থাকলেও পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
  • নদীতে স্রোত বেশি, সাঁতার কাটার সময় সাবধান থাকুন
  • স্থানীয় আদিবাসীদের সম্মান করুন — বিনা অনুমতিতে ছবি/ভিডিও তুলবেন না।
  • পরিবেশ রক্ষা করুন — আবর্জনা ফেলার অভ্যাস তৈরি করুন।

তিন্দু — একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছা করবে

তিন্দু শুধু একটা জায়গা নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার, নিজের ভেতরের রোমাঞ্চপ্রেমী সত্তাকে জাগিয়ে তোলার একটা উপায়। বিশাল পাহাড়, কলকল শব্দে বয়ে চলা সাঙ্গু, রহস্যময় ঝর্ণা আর অতিথিপরায়ণ মানুষেরা — সব মিলিয়ে তিন্দু এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

তো, ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন বাংলাদেশের এই লুকানো ভূস্বর্গের খোঁজে!

তিন্দু এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
312.77 কিমি
বান্দরবান থেকে
57.1 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
নাফাখুম
ডিম পাহাড়
আমিয়াখুম জলপ্রপাত
সাতভাইখুম
দামতুয়া ঝর্ণা
জাদিপাই ঝর্ণা
আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ
কেওক্রাডং
চিংড়ি ঝর্ণা
বগালেক
মারায়ন তং
ঋজুক ঝর্ণা
খাঞ্জেলী দীঘি
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
চিম্বুক
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
সাইরু হিল রিসোর্ট

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন