পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির (Bodeshshori Mondir) একটি কারুকার্য খচিত প্রাচীন মন্দির। এটি প্রায় ২.৭৮ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এই মন্দিরের নাম অনুসারে বোদা উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে।
প্রায় চারশো বছরের পুরনো এই মহাপীঠ মন্দিরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে রাজা দক্ষের কন্যা ও মহাদেব শিবের পত্নী সতীর বাম পায়ের গোড়ালির অংশ বিদ্যমান। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি এক পবিত্র ও আধ্যাত্মিক স্থান।
পৌরাণিক ইতিহাস
স্কন্ধ পুরাণ অনুযায়ী, দেবী সতীর আত্মত্যাগের পর শিব যখন তার মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্য শুরু করেন, তখন বিশ্ব ধ্বংসের আশঙ্কায় ভগবান বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেন। এতে সতীর দেহ ৫১টি অংশে বিভক্ত হয়, যা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ও বাংলাদেশের দু’টি স্থানে পতিত হয়। এর মধ্যে একটি অংশ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এবং অপরটি পঞ্চগড়ের বদেশ্বরীতে পড়ে। এই খণ্ডিত অংশকে কেন্দ্র করেই বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।
কিভাবে যাবেন?
সড়ক পথে:
ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, তানযিলা ট্রাভেল ও বরকত ট্রাভেলসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাসে পঞ্চগড় যাওয়া যায়।
- নন-এসি বাস ভাড়া: ১০০০-১১০০ টাকা
- এসি বাস ভাড়া: ১৩০০-১৯০০ টাকা
রেলপথে:
ঢাকার কমলাপুর থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি পঞ্চগড় যাওয়া যায়।
- ট্রেন ভাড়া (শ্রেণীভেদে): ৬৯৫ থেকে ২৩৯৮ টাকা
স্থানীয় যাতায়াত:
পঞ্চগড় পৌঁছে বোদা উপজেলায় নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে সহজেই বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
পঞ্চগড় শহরে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল মৌচাক
- হোটেল রাজ নগর
- হিলটন বোর্ডিং
- নূর হোটেল
- রোকখানা বোর্ডিং
- হোটেল প্রীতম
- হোটেল এইচ কে প্যালেস
- হোটেল ইসলাম
কোথায় খাবেন?
পঞ্চগড় শহরের কিছু জনপ্রিয় খাবারের হোটেল:
- হোটেল করোটিয়া
- হোটেল মৌচাক
- হোটেল নিরিবিলি
- হোটেল হাইওয়ে
- হোটেল হামজা
পঞ্চগড় জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান:
- বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট
- তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন
- মহারাজার দীঘি
- মির্জাপুর শাহী মসজিদ
- চা বাগান
- রকস মিউজিয়াম
বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির শুধু ধর্মীয় নয়, বরং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে পঞ্চগড় ভ্রমণে এটি হতে পারে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!