নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার নাম হরিশচন্দ্রের পাঠ (Harishchandra Path)। চাড়াল কাটা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত, প্রায় এক বিঘা জমির উপর বিস্তৃত পাঁচটি বিশাল কালো পাথরের খণ্ড ঘেরা এই স্থানটি দূর থেকে দেখতে উঁচু ঢিবির মতো লাগে। একসময় ঢিবির উচ্চতা ৫০-৬০ ফুট থাকলেও এখন তা কমে প্রায় ১০ ফুটে নেমে এসেছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, পাথরখণ্ডগুলো কখনো কখনো মাটির নিচে ডুবে যায়, আবার সময়ের পরিক্রমায় উপরে উঠে আসে।
দানশীল রাজা হরিশচন্দ্রের নামে এই স্থানের ইতিহাস জড়িত। তাঁর শেষ জীবনে তিনি একটি শিব মন্দির নির্মাণ শুরু করেছিলেন, যদিও তা সম্পূর্ণ করার আগেই তিনি মারা যান। পরবর্তীতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মন্দিরটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। অতীতে এখানে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মূর্তি ছিল, যা এখন আর দেখা যায় না।
হরিশচন্দ্রের পাঠের রহস্যময় লোককাহিনি
এই প্রাচীন স্থাপনাকে ঘিরে অনেক রহস্যময় কাহিনি প্রচলিত আছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, কেউ যদি মন্দির এলাকা থেকে মাটি, ইট, বা পাথরের টুকরো নিয়ে যায়, তবে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। আবার, ব্রিটিশ আমলে মন্দির সংস্কারের কাজ চলাকালীন, আটজন শ্রমিক মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলে হঠাৎ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, এবং তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে আর কখনো মন্দিরের সংস্কার কাজ করা হয়নি।
তবে, রহস্যের আবরণ সত্ত্বেও প্রতিবছর শিবমন্দিরে তিনটি বড় ধর্মীয় উৎসব জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। এছাড়া, হরিশচন্দ্র গ্রামে রাজা হরিশচন্দ্রের আরও কিছু প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।
যাতায়াতের উপায়
ঢাকা থেকে নীলফামারী যাওয়ার জন্য সড়ক, রেল এবং আকাশপথের সুযোগ রয়েছে।
- বাস: রাজধানীর গাবতলী, কলেজগেট, বা মহাখালী থেকে সরাসরি নীলফামারী যাওয়ার বাস ছাড়ে। নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০-৯৫০ টাকা।
- ট্রেন: কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে নীলফামারী পৌঁছানো যায়। ট্রেনের ভাড়া ৬২৫-২,২০৭ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- ফ্লাইট: সময় বাঁচাতে চাইলে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গিয়ে সেখান থেকে বাস, সিএনজি, বা অটোরিকশায় নীলফামারী এবং পরে খুটামারা ইউনিয়নে পৌঁছানো যাবে।
থাকার ব্যবস্থা
নীলফামারী জেলায় বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল প্রিমিয়ার
- রনি ড্রিম
- শিশির হোটেল
- অবকাশ হোটেল
- আর রহমান গেস্ট হাউজ
- নাভানা রেস্ট হাউজ
খাবারের ঠিকানা
খাবারের জন্য জলঢাকা উপজেলায় বেশ কয়েকটি ভালো মানের স্থান আছে, যেমন:
- বৈশাখী হোটেল
- রিমু হোটেল
- হোটেল রানা
এছাড়া স্থানীয় ছোট ছোট খাবারের দোকানে স্থানীয় স্বাদের খাবার পাওয়া যায়, যা আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!