যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামে অবস্থিত চাঁচড়া শিবমন্দির একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা, যার বয়স প্রায় ৩২২ বছর। ১৬৯৬ সালে রাজা মনোহর রায়ের নির্দেশে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। এটি আটচালা ধাঁচে নির্মিত, যেখানে বড় একটি চৌচালা ছাদের উপরে একটি ছোট আকারের ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরটি পূর্বদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে এবং এর সম্মুখভাগে রয়েছে তিনটি খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথ।
প্রাচীন পোড়ামাটির অলংকরণে সমৃদ্ধ এই মন্দিরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯.৫ মিটার এবং প্রস্থ ৮.১৩ মিটার। নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে চুন, সুরকি ও বর্গাকৃতির ইট। মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলীতে স্পষ্টভাবে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সতীশচন্দ্র মিত্র তাঁর ১৯১৪ সালের লেখা ‘যশোর-খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থে চাঁচড়া রাজবংশ এবং এই শিবমন্দিরের কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত একটি স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত।
প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে মন্দিরে ধর্মীয় আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে শিবরাত্রি, দোলযাত্রা এবং লোকনাথ বাবার পাদুকা উৎসবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
চাঁচড়া শিবমন্দিরে কিভাবে যাবেন
যশোর শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বর থেকে চাঁচড়া শিবমন্দিরের দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। আপনি চাইলে রিকশা বা ভ্যানে করে সহজেই মন্দিরে পৌঁছাতে পারবেন, কারণ এটি যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত।
ঢাকা থেকে যশোর – যাত্রা পদ্ধতি
বাসে যাত্রা:
ঢাকা থেকে যশোর যেতে বাস সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। কল্যাণপুর, গাবতলী ও কলাবাগান থেকে সোহাগ, হানিফ, এসপি গোল্ডেন লাইন, দেশ ট্রাভেলস, এম.আর এন্টারপ্রাইজ, একে ট্র্যাভেলস, গ্রিনলাইন, শ্যামলী ও ঈগল পরিবহণের এসি/নন-এসি বাস পাওয়া যায়। ভাড়া সাধারণত ৫৫০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
ট্রেনে যাত্রা:
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যশোরগামী বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে যেমন:
- সুন্দরবন এক্সপ্রেস: সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে (বুধবার বাদে)
- চিত্রা এক্সপ্রেস: সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে (রবিবার বাদে)
- বেনাপোল এক্সপ্রেস: রাত ১১:৪৫ মিনিটে (বুধবার বাদে)
- রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস: সকাল ১০:৪৫ মিনিটে (সোমবার বাদে)
ট্রেনের ভাড়া ৪১০ থেকে ১৯২৭ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, শ্রেণি অনুযায়ী।
বিমানযোগে যাত্রা:
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার নিয়মিতভাবে যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
যশোরে থাকার ব্যবস্থা
যশোর শহরে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্ট হাউস। জনপ্রিয় কিছু হোটেল হলো:
- হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল: 01795-477977
- হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল: 0421-67478
- হোটেল শামস ইন্টারন্যাশনাল: 0421-71564
- জাবীর ইন্টারন্যাশনাল হোটেল: +8801880-004044
- হোটেল আরএস ইন্টারন্যাশনাল: 0421-62617
যশোরে কী খাবেন
যশোরে গেলে স্থানীয় কিছু খাবার অবশ্যই চেখে দেখা উচিত। জামতলার বিখ্যাত মিষ্টি, খেজুরের রস দিয়ে তৈরি প্যারা সন্দেশ ও ভিজা পিঠা মিস না করলেই নয়। এছাড়া চার খাম্বা মোড়ের ‘জনি কাবাব’-এর কাবাব, চাপ, ফ্রাই এবং লুচি খুব জনপ্রিয়। ধর্মতলার মালাই চা ও চুকনগরের চুইঝাল খাবারও অনন্য স্বাদের।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!