যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামে ঝাঁপা বাওড়ের উপর প্রায় ১৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি অসাধারণ ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুটি তৈরি হওয়ায় কপোতাক্ষ নদ ও ঝাঁপা বাওড় দ্বারা বিচ্ছিন্ন এলাকার মানুষদের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সমস্যা অনেকটাই লাঘব হয়েছে। আগে যেখানে যাতায়াত করতে নৌকার প্রয়োজন হতো কিংবা প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হতো, এখন এই সেতু পার হলেই গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।
এলাকার মানুষদের উদ্যোগে গঠিত "ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন" এই সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করে। স্থানীয়দের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় তিন মাস সময় লেগে ১৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রস্থের এই ভাসমান সেতুটি তৈরি হয়। বর্তমানে ছোট যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল, ভ্যান, এমনকি হেঁটে চলাচলকারীরাও এই সেতু ব্যবহার করতে পারেন।
৮৩৯টি নীল রঙের ভাসমান ড্রামের ওপর স্টিলের পাত বসিয়ে নির্মিত এই সেতুর দুই পাশে রয়েছে নিরাপত্তা রেলিং। এই সেতুতে চলাচল করতে গিয়ে দর্শনার্থীরা এক ভিন্নধর্মী রোমাঞ্চ অনুভব করেন। দেশের প্রথম ও দীর্ঘতম ভাসমান সেতু হওয়ায় বহু মানুষ প্রতিদিনই এই স্থানটি ঘুরে দেখতে আসছেন। পর্যটকদের আগমনে এখানে গড়ে উঠেছে একটি পিকনিক স্পটও। পূর্বপাড়ে অবস্থিত মসজিদ ও ঈদগাহ কমিটি পর্যটকদের গাড়ি রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। সেতুতে উঠতে চাইলে প্রতিটি টিকেটের মূল্য মাত্র ৫ টাকা।
কিভাবে যাবেন ঝাঁপা ভাসমান সেতুতে?
এই আকর্ষণীয় ভাসমান সেতু দেখতে চাইলে প্রথমে ঢাকাসহ দেশের যেকোনো স্থান থেকে যশোর জেলা শহরে পৌঁছাতে হবে। যশোর শহর থেকে স্থানীয় যানবাহনে চড়ে সহজেই রাজগঞ্জ বাজার হয়ে ঝাঁপা সেতুতে যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে যশোর বাসে:
কল্যাণপুর, গাবতলী ও কলাবাগান থেকে সোহাগ, হানিফ, এসপি গোল্ডেন লাইন, দেশ ট্র্যাভেলস, এম.আর এন্টারপ্রাইজ, একে ট্র্যাভেলস, গ্রিন লাইন, শ্যামলী, ও ঈগল পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস যশোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। নন-এসি বাসের ভাড়া প্রায় ৫৫০-৭৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ঢাকা থেকে যশোর ট্রেনে:
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সপ্তাহে ছয় দিন (বুধবার বাদে) সকাল ৮:১৫ মিনিটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে (রবিবার বাদে) চিত্রা এক্সপ্রেস যশোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এছাড়াও বেনাপোল এক্সপ্রেস রাত ১১:৪৫ মিনিটে (বুধবার বাদে) যশোরের পথে রওনা হয়। ট্রেনের টিকিটের দাম শ্রেণিভেদে ৫৬০ থেকে ১৯৩৮ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
যশোরে কোথায় থাকবেন?
যশোর শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো:
- হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল
- জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেল
- হোটেল আর.এস ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল শামস ইন্টারন্যাশনাল
এছাড়া সরকারি রেস্ট হাউস এবং আরও কিছু মাঝারি মানের হোটেলও পাওয়া যায়, যারা সাশ্রয়ী খরচে ভালো সেবা দিয়ে থাকে।
যশোরে কী খাবেন?
যশোরে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই কিছু স্থানীয় খাবার চেখে দেখা উচিত। যেমন:
- জামতলার বিখ্যাত মিষ্টি
- খেজুরের গুড়ের প্যারা সন্দেশ
- ভিজা পিঠা
চার খাম্বার মোড়ে অবস্থিত ‘জনি কাবাব’ থেকে খেতে পারেন সুস্বাদু কাবাব, ফ্রাই, চাপ ও লুচি। সময় থাকলে ধর্মতলার মালাই চা এবং চুকনগরের বিখ্যাত চুই ঝাল খাবার অবশ্যই ট্রাই করে দেখতে পারেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!