ঝিনাইদহ জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হলো গলাকাটা মসজিদ। এটি সুলতানি আমলের নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে মাটি খনন করে এই মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার এবং সংরক্ষণ করা হয়।
বিশ্বস্ত ধারণা অনুযায়ী, ১৬শ শতকে খান জাহান আলীর সময়কালে এই মসজিদ নির্মিত হয়। বর্তমানে এটি গলাকাটা দীঘি ঢিবি মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দর্শনীয় – ৬টি গম্বুজ, ২৫ ফুট উচ্চতা এবং ৫ ফুট প্রশস্ত দেয়াল, ৩টি পোড়ামাটির খিলানসমৃদ্ধ প্রবেশপথ, ও ৪টি ষড়ভুজাকৃতির স্তম্ভের উপর নির্মিত একটি বর্গাকৃতির কক্ষ। মসজিদের ভিতরে দেখা যায় তিনটি দৃষ্টিনন্দন অর্ধবৃত্তাকার মেহরাব এবং দুটি ৮ ফুট উঁচু কষ্টিপাথরের মিনার, যেগুলো টেরাকোটার অলঙ্করণে সজ্জিত।
মসজিদের পাশেই বিস্তৃত একটি দীঘি, যার নাম গলাকাটা দীঘি। স্থানীয় জনশ্রুতি মতে, বারোবাজার এলাকার এক রাজা প্রজাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে তাঁদের এই দীঘিতে বলি দিতেন। সেই থেকেই দীঘিটির নামকরণ হয় গলাকাটা দীঘি।
মসজিদ খননের সময় এখানে পঞ্চদশ শতকের কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, হাতে লেখা কোরআন শরীফ এবং একটি প্রাচীন তলোয়ার উদ্ধার করা হয়েছে, যা বর্তমানে মসজিদের ভিতরে সংরক্ষিত আছে। সুলতানি আমলের এই প্রাচীন মসজিদ এবং দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। গলাকাটা মসজিদের কাছাকাছি রয়েছে আরও কিছু ঐতিহাসিক মসজিদ, যেমন – জোড়বাংলা জামে মসজিদ, গোড়ার মসজিদ এবং পীর পুকুর জামে মসজিদ।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি পরিবহণ, জেআর পরিবহণ, চুয়াডাঙ্গা, হানিফ, দর্শনা এবং পূর্বাশা ডিলাক্স বাস সার্ভিসে সরাসরি ঝিনাইদহ যাওয়া যায়। এসি বাসের ভাড়া সাধারণত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৬৫০ টাকা।
ঝিনাইদহ শহর থেকে সিএনজি বা লোকাল বাসে করে কালীগঞ্জ হয়ে বারোবাজার পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে হাকিমপুর-বারোবাজার সড়কের পাশেই গলাকাটা মসজিদ অবস্থিত। এছাড়া যশোর থেকেও ঝিনাইদহ মহাসড়ক ধরে ২০ কিলোমিটার উত্তর দিকে বারোবাজারে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
ঝিনাইদহ শহরে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন –
হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, হোটেল ড্রিম ইন, এবং ক্ষণিকা রেস্ট হাউজ।
কোথায় খাবেন?
ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরের আশেপাশে বেশ কিছু মানসম্মত খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।
ঝিনাইদহের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
গলাকাটা মসজিদ ছাড়াও ঝিনাইদহে ঘুরে দেখার মতো আরও কিছু আকর্ষণীয় স্থান হলো –
- বারোবাজার
- নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট
- মিয়ার দালান
- জোহান ড্রিম ভ্যালী পার্ক
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!