চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি বিখ্যাত প্রাচীন ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শন হলো ঠাকুরপুর জামে মসজিদ, যা স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহ্যের অপূর্ব মিশেল। চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে অবস্থিত ঠাকুরপুর গ্রামে এ মসজিদটির অবস্থান। এটি বর্তমানে স্থানীয়ভাবে "পীরগঞ্জ জামে মসজিদ" নামেও পরিচিত।
মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো লিখিত প্রমাণ না থাকলেও স্থানীয় প্রবীণদের মতে, ১৬৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত হযরত আফু শাহ্ নামক এক ধর্মপ্রচারক ঠাকুরপুরে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন এবং জিনদের সহায়তায় একরাতেই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই কাহিনীর কারণে অনেকেই একে “জিনের মসজিদ” বলে ডাকেন।
প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপর বিস্তৃত এই মসজিদের প্রবেশদ্বারে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন তোরণ। মসজিদের পেছনে একটি বড় পুকুর, সারি সারি নারিকেল গাছ ও একটি কবরস্থান রয়েছে, যা পুরো পরিবেশটিকে আরও পবিত্র ও মনোমুগ্ধকর করে তোলে। জনশ্রুতি আছে, প্রতি বৃহস্পতিবার জিনেরা এখানে নামাজ আদায় করে এবং মানুষজনের রেখে যাওয়া পানি বা তেলে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে যায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই পানি বা তেল নানা সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
মসজিদটি নানা সময়ে সংস্কারের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে, তবে এর মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। প্রতি বছর বাংলা ১২ ফাল্গুন তারিখে এখানে ওরস মাহফিলের আয়োজন করা হয়, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ অংশগ্রহণ করে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা যেতে চাইলে গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী, পূর্বাশা, দর্শনা ডিলাক্স, চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেস বা রয়েল এক্সপ্রেসের মতো পরিবহনে চেপে যাওয়া যায়। বাস ভাড়া গন্তব্য ও বাসের মানভেদে প্রায় ৬৫০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
রেলপথেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে চিত্রা, সুন্দরবন এক্সপ্রেস অথবা বেনাপোল এক্সপ্রেসে করে চুয়াডাঙ্গা নামা যায়। ট্রেনের ক্লাস অনুযায়ী ভাড়া ৪৬৫ টাকা থেকে শুরু করে ১,৫৯৩ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ঠাকুরপুর মসজিদে যেতে ইজিবাইক বা রিকশা ব্যবহার করতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
চুয়াডাঙ্গা শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে সানড্রিয়াল হোটেল, হোটেল অবকাশ, হোটেল আল-আমিন, হোটেল আল মেরাজ, অন্তরাজ আবাসিক হোটেল, প্রিন্স আবাসিক হোটেল, হোটেল সোনার বাংলা এবং হোটেল সুরমা উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
চুয়াডাঙ্গা শহরের কলেজ রোড এলাকায় বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় গেলে কালিপদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি অবশ্যই চেখে দেখতে ভুলবেন না!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!