ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ (Jhaudia Shahi Masjid) এক অনন্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইট, পাথর, বালি ও চিনামাটির সংমিশ্রণে নির্মিত এই মসজিদের সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া না গেলেও, একে ঘিরে নানা লোককথা প্রচলিত রয়েছে। জনশ্রুতি অনুসারে, ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ অলৌকিকভাবে নির্মিত হয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে ইরাকের সুফি সাধক শাহ সুফি আদারি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আসেন এবং ইবাদতের জন্য এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। শিল্পগুণে সমৃদ্ধ ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ বর্তমানে কুষ্টিয়ার অন্যতম প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত।

মসজিদের স্থাপত্য ও নকশা

শৈল্পিক কারুকাজে সমৃদ্ধ এই মসজিদের মূল কাঠামোর মধ্যে তিনটি গম্বুজ, তিনটি দরজা এবং নামাজের জন্য তিনটি কাতার রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের উপরিভাগে সুদৃশ্য পাঁচটি গম্বুজ এবং প্রবেশদ্বারের পাশে দুটি মিনার দেখা যায়। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত মনোরম জানালা রয়েছে, যা এর নান্দনিকতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মাটি, চুন ও সুরকির সংমিশ্রণে তৈরি হওয়ায় মসজিদের ভেতরের পরিবেশ সবসময় ঠান্ডা থাকে। তবে এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দেয়ালে করা নান্দনিক আলপনা ও কারুকাজ। মসজিদের পাশেই সুফি সাধক শাহ সুফি আদারির কবর অবস্থিত। ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর এই মসজিদটিকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বর্তমানে এটি মুসল্লি ও পর্যটকদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় যাওয়ার জন্য বাস ও ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ এসবি সুপার ডিলাক্স, শ্যামলী, হানিফ বা পাবনাগামী বাসে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে কুষ্টিয়ায় পৌঁছানো যায়। নন-এসি বাসের ভাড়া ৬০০-৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা।

ট্রেনে যেতে চাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস বা বেনাপোল এক্সপ্রেসের যেকোনো একটিতে চড়ে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে নামতে হবে।

  • সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮:১৫ মিনিটে
  • মধুমতি এক্সপ্রেস বিকাল ৩:০০ টায়
  • বেনাপোল এক্সপ্রেস রাত ১১:৪৫ মিনিটে ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায়।

ট্রেনের আসনভেদে টিকিটের মূল্য ৪১০ থেকে ৯৪৩ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন থেকে চৌড়হাঁস মোড়ে এসে সিএনজি বা বাসে ঝাউদিয়া-মাছপাড়া সড়ক হয়ে সহজেই ঝাউদিয়া শাহী মসজিদে পৌঁছানো যায়।

কোথায় থাকবেন?

কুষ্টিয়ায় রাত্রিযাপনের জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

  • হোটেল রাতুল
  • হোটেল নূর
  • হোটেল লিবার্টি
  • পদ্মা হোটেল
  • শাপলা হোটেল

কোথায় খাবেন?

খাবারের জন্য কুষ্টিয়া শহরে বেশ কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে—

  • খেয়া রেস্টুরেন্ট
  • পালকি
  • চিলিস ফুড পার্ক
  • জাহাঙ্গীর হোটেল
  • শিল্পী হোটেল উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা ও কুলফি অবশ্যই চেখে দেখার মতো একটি বিশেষ খাবার।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

কুষ্টিয়ার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে—

  • লালন শাহের মাজার
  • লালন শাহ সেতু
  • মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা
  • টেগর লজ
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী ও জাদুঘর

ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যশিল্পের জন্যও এক অনন্য নিদর্শন। কুষ্টিয়ায় ভ্রমণে গেলে এটি অবশ্যই দর্শন করা উচিত!

ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
138.11 কিমি
কুষ্টিয়া থেকে
16.44 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি
ঘোলদাড়ী শাহী মসজিদ
লালন শাহের মাজার
টেগর লজ
শৈলকুপা শাহী মসজিদ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর
মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা
জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক
পুলিশ পার্ক
ঠাকুরপুর জামে মসজিদ
মিয়ার দালান
ঢোল সমুদ্র দীঘি
মেহেরুন শিশু পার্ক
তাড়াশ রাজবাড়ী
জোড় বাংলা মন্দির
জোড় বাংলা মন্দির
লালন শাহ সেতু
হার্ডিঞ্জ ব্রীজ
পাকশী রিসোর্ট
কে পি বসুর বাড়ি

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন