যমুনা সেতু

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ভূঞাপুর ও পশ্চিমাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ জেলার সংযোগকারী যমুনা বহুমুখী সেতু, যা বঙ্গবন্ধু সেতু (Bangabandhu Bridge) নামেও পরিচিত, দেশের এক অনন্য স্থাপত্য। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে উদ্বোধিত এই সেতুটি দক্ষিণ এশিয়ার ষষ্ঠ বৃহৎ এবং বিশ্বের একাদশ দীর্ঘতম সেতু হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৯৪ সালে জাপান সরকারের সহযোগিতায় এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়, এবং ১৯৯৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রথম দাবি তুলেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, যা পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর ফলে দেশের অর্থনীতি, সড়ক এবং রেল যোগাযোগে বিপুল উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

সেতুর বৈশিষ্ট্য ও নির্মাণ

টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত বঙ্গবন্ধু সেতু এশিয়ান হাইওয়ে এবং আন্তঃএশীয় রেলপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার। দুর্যোগ প্রতিরোধী প্রযুক্তিতে নির্মিত সেতুটি ৮০-৮৫ মিটার লম্বা ইস্পাত বিমের ওপর স্থাপিত। এতে রয়েছে ৪ লেনের সড়কপথ এবং ২টি রেললাইন, যা যানবাহন ও ট্রেন চলাচলকে আরও সহজ করেছে।

যাতায়াতের উপায়

টাঙ্গাইল শহর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দূরত্ব মাত্র ৩২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা নিজস্ব গাড়িতে সরাসরি টাঙ্গাইলে পৌঁছানো যায়। একতা, সুন্দরবন, লালমনি, সিল্কসিটি, পদ্মা, দ্রুতযান, চিত্রা, ধূমকেতু, নীলসাগর, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস বা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনে সরাসরি সেতুর পূর্ব প্রান্তে নামা যায়। ভাড়া ১২০ থেকে ৪৭৮ টাকার মধ্যে। এছাড়া জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-জামালপুর মহাসড়ক দিয়ে বাসে সরাসরি সেতুতে যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দেখে ফেরত আসা সম্ভব। তবে রাত যাপনের প্রয়োজন হলে টাঙ্গাইল শহরে সরকারি ও বেসরকারি হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে আল ফয়সাল, ব্যুরো হোটেল, আনসারি প্যালেস, হোটেল প্রিন্স ও হোটেল শান্তি। সেতুর কাছেই বিলাসবহুল বঙ্গবন্ধু সেতু রিসোর্ট রয়েছে, যেখানে আগে থেকেই বুকিং করতে হয়। এছাড়া সার্কিট হাউস ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলোও থাকার জন্য বেছে নিতে পারেন।

খাবার ও স্থানীয় স্বাদ

টাঙ্গাইল শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। নিরালা মোড়ের রেস্টুরেন্টগুলো খাওয়ার জন্য বেশ জনপ্রিয়। শহরে গেলে অবশ্যই বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

যমুনা সেতুর পাশাপাশি টাঙ্গাইলের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান যেমন মহেরা জমিদার বাড়ি, পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, ধনবাড়ি জমিদার বাড়ি, ২০১ গম্বুজ মসজিদ এবং মধুপুর জাতীয় উদ্যান ঘুরে দেখতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি দেখার পাশাপাশি আশপাশের ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ হারাবেন না!

যমুনা সেতু এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
91.93 কিমি
টাঙ্গাইল থেকে
21.85 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক
বঙ্গবন্ধু সেতু রিসোর্ট
চায়না বাঁধ
এলেঙ্গা রিসোর্ট
পরীর দালান
নবরত্ন মন্দির
২০১ গম্বুজ মসজিদ
আতিয়া মসজিদ
আদম কাশ্মীর মাজার
করটিয়া জমিদার বাড়ি
পাকুল্লা মসজিদ
রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি
ধনবাড়ি মসজিদ
ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল
মহেরা জমিদার বাড়ি
নাগরপুর চৌধুরী বাড়ী
জলছত্র আনারস হাট
পীরগাছা রাবার বাগান
সন্তোষপুর রাবার বাগান
মোকনা জমিদার বাড়ি

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন