জঙ্গলবাড়ি দূর্গ কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রধান নেতা ঈশা খাঁ এখানে তাঁর দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
ইতিহাস
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, মুঘল শাসন ও ইংরেজদের শোষণের শিকার বাংলার জমিদারদের আমন্ত্রণে ঈশা খাঁ আফগানিস্তান থেকে ১৪০০ জন ঘোড়সওয়ার, ২১টি নৌযান ও প্রচুর গোলাবারুদ নিয়ে তৎকালীন ত্রিপুরা অঞ্চলে আসেন। ১৫৮৫ সালে তিনি কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা ও রাম হাজরাকে পরাজিত করে জঙ্গলবাড়ি দূর্গ দখল করেন।
দূর্গটি দখলের পর ঈশা খাঁ দুর্গের ভিতরে নতুন কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন এবং তিনদিক পরিখা খনন করে নরসুন্দা নদীর সঙ্গে যুক্ত করেন। এতে দুর্গটি গোলাকার দ্বীপের আকৃতি ধারণ করে। তবে ধারণা করা হয়, মূল জঙ্গলবাড়ি দূর্গ প্রাক-মুসলিম যুগে নির্মিত। পরে এখান থেকেই ঈশা খাঁ সোনারগাঁওসহ ২২টি পরগণা দখল করেন। বাংলা ১৩২৬ সালের ভূমিকম্পে দুর্গটির দরবার হল, বাসস্থান ও একটি মসজিদ ছাড়া প্রায় সব স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
যা দেখার মতো
দরবার হল
প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত দরবার হলের গায়ে এখনো বিভিন্ন নকশা ও স্থাপত্য শৈলী দেখা যায়। এটি তৎকালীন সময়ের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।
ঈশা খাঁর মসজিদ
জঙ্গলবাড়িতে একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে যা বার ভূঁইয়ার স্মৃতির অংশ। ৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রশস্ত আয়তাকার এই মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং প্রতিটি কোণায় সুন্দর মিনার রয়েছে। দেয়ালগুলো প্রায় ৪ ফুট পুরু। মসজিদের পূর্ব পাশে ১১ ফুট প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে। এখনও স্থানীয় মুসল্লিরা নিয়মিতভাবে এখানে নামাজ আদায় করেন।
ঈশা খাঁ স্মৃতি জাদুঘর
করিমগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঈশা খাঁর বাসস্থানের কিছু অংশ সংস্কার করে ‘ঈশা খাঁ স্মৃতি জাদুঘর’ তৈরি করা হয়েছে। এখানে একটি পাঠাগার ও ঈশা খাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে।
যাওয়ার পথ
জঙ্গলবাড়ি দূর্গে যেতে হলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে আসতে হবে।
ট্রেনে
ঢাকা থেকে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে করে সকাল ৭:১৫-এ যাত্রা করলে ১১ টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছানো যায়। ট্রেনের টিকিটের দাম শ্রেণি ভেদে ১৩৫ থেকে ৩৬৮ টাকা।
বাসে
ঢাকার মহাখালী বা গোলাপবাগ থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাসে করে গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। বাসভাড়া ২৭০-৩৫০ টাকা।
কিশোরগঞ্জ শহরের একরামপুর মোড় থেকে সিএনজি বা ইজিবাইকে করে ২০-২৫ টাকায় সহজেই জঙ্গলবাড়ি পৌঁছানো যায়।
খাবার ও থাকার ব্যবস্থা
খাবার
জঙ্গলবাড়ি দূর্গের কাছাকাছি ভালো খাবারের জায়গা নেই। নিকটস্থ বাজারে সাধারণ ভাত ও স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। ভালো খাবারের জন্য কিশোরগঞ্জ শহরে ফিরে ধানসিঁড়ি, দারুচিনি, রিভার ভিউ কিচেন, তাজ রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন।
থাকা
দূর্গের আশপাশে থাকার ব্যবস্থা নেই। কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোডে রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, ক্যাসেল সালামসহ ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কিশোরগঞ্জের আশপাশের দর্শনীয় স্থান
যদি সময় থাকে, তাহলে আরও কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন:
- কবি চন্দ্রাবতী মন্দির
- গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি
- কিশোরগঞ্জ লেক ওয়াচ টাওয়ার
- মিঠামইন হাওর
- নিকলী হাওর
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!