মিঠামইন কিশোরগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। এর উত্তরে ইটনা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম, পূর্বে বানিয়াচং ও অষ্টগ্রাম এবং পশ্চিমে করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলা অবস্থিত। হাওর এলাকা হওয়া সত্ত্বেও মিঠামইন একটি প্রাচীন জনপদ হিসেবে পরিচিত। এ এলাকাকে মিঠামন, মিটামইন বা মিটামন নামেও ডাকা হয়। নামের উৎস সম্পর্কে ধারণা করা হয়, একসময় এখানে প্রচুর মিষ্টি রসের খাগড়া গাছের বন ছিল। সেই খাগড়ার বনের কারণেই এর নাম হয় মিঠাবন, যা থেকে মিঠামইন নামটি এসেছে।
ভ্রমণের জন্য মিঠামইন
মিঠামইনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অল্প সময়ে ঘুরে আসা যায়। বিশেষ করে মিঠামইন-অষ্টগ্রামের হাওর রোড চালু হওয়ার পর থেকে এখানে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
মিঠামইন হাওর যাওয়ার উপায়
মিঠামইন হাওর ভ্রমণের জন্য প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে আসতে হবে।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ:
- ট্রেনে: ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭:১৫-এ এগারসিন্দুর প্রভাতি ট্রেন (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে। ভাড়া: ১৩৫-৩৬৮ টাকা।
- বাসে: মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্যা পরিবহণে অথবা সায়েদাবাদ থেকে যাতায়াত বাসে কিশোরগঞ্জ যাওয়া যায়। ভাড়া: ২৭০-৩৫০ টাকা।
কিশোরগঞ্জ থেকে মিঠামইন:
- রিকশা/ইজিবাইক দিয়ে একরামপুর বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল সিএনজি/অটো অথবা রিজার্ভ গাড়িতে বালিখলা ঘাট।
- বর্ষাকালে বালিখলা ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে মিঠামইন হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। নৌকা ভাড়া ঘন্টাপ্রতি ২০০-৫০০ টাকা এবং রিজার্ভ ভাড়া ৮০০-৫০০০ টাকার মধ্যে।
শুকনো মৌসুমে বালিখলা ঘাট থেকে ফেরি ও সাবমার্সিবল রোড ধরে সরাসরি মিঠামইনে যাওয়া যায়।
মিঠামইনে দেখার জায়গা
- রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি:
মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে অবস্থিত। রিকশা নিয়ে সহজেই যাওয়া যায়। - মালিকের দরগা:
ট্রলার বা মোটরসাইকেলে ঘাগড়া হয়ে মালিকের দরগা যাওয়া যায়। - দিল্লির আখড়া:
চামড়া ঘাট থেকে ট্রলার দিয়ে দিল্লির আখড়ায় যেতে হয়। - ঐতিহ্যবাহী মসজিদ ও হস্তশিল্প:
এখানে মহিলাদের তৈরি হস্তশিল্প, নৌকা বাইচ এবং লাঠি খেলা মিঠামইনের ঐতিহ্য তুলে ধরে।
থাকার ব্যবস্থা
মিঠামইনে থাকার জন্য প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট, হোটেল আল-কামাল এবং হোটেল সিকদার আবাসিক সুবিধা রয়েছে। ভাড়া: ৫০০-১২০০ টাকা। উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতেও থাকার সুযোগ আছে।
কোথায় খাবেন
মিঠামইন বাজারের স্থানীয় খাবার হোটেলে হাওরের তাজা মাছের পদ খেতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য হোটেল: কাচা লংকা, সেলিম রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল চাঁনপুর।
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান
নিকলী হাওর, ইটনা হাওর, নরসুন্দা লেক, চন্দ্রাবতীর মন্দির ও মানব বাবুর জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখতে পারেন।
মিঠামইন ভ্রমণ আপনার জন্য হতে পারে হাওরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য উপভোগ করার এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!