কবি চন্দ্রাবতী বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা কবি হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৫৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দ্বিজবংশী দাশ বিখ্যাত কাব্য মনসা মঙ্গল-এর রচয়িতা এবং মায়ের নাম সুলোচনা। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে পাতোয়াইর গ্রামের ফুলেশ্বরী নদীর পাশে স্থাপিত কারুকার্যখচিত দুটি শিবমন্দির কবি চন্দ্রাবতীর জীবন ও স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। এই মন্দিরগুলোকেই কবি চন্দ্রাবতী শিব মন্দির বা কবি চন্দ্রাবতী মন্দির বলা হয়। ধারণা করা হয়, মন্দিরগুলো কবির জীবনের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী। মন্দিরের পাশে দর্শনার্থীদের বসার জায়গাও রয়েছে। প্রতিদিন বিকালে ও ছুটির দিনে বহু মানুষ এই মন্দির দেখতে আসেন। মন্দিরের পাশেই রয়েছে কবি চন্দ্রাবতীর প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি।
কবি চন্দ্রাবতী মন্দির এর ইতিহাস
প্রচলিত আছে, কৈশোরে কবি চন্দ্রাবতীর সঙ্গে ব্রাহ্মণ যুবক জয়ানন্দের গভীর প্রেম হয়েছিল। তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়ে কবির পিতা তাদের বিয়ের দিন ধার্য করেন। কিন্তু পরবর্তীতে জয়ানন্দ প্রতিশ্রুতি ভেঙে ধর্মান্তরিত হয়ে একজন মুসলিম নারীকে বিয়ে করেন। এতে কবি চন্দ্রাবতী গভীরভাবে ভেঙে পড়েন। তখন তিনি উপাসনার জন্য পিতার কাছে একটি মন্দির নির্মাণের অনুরোধ জানান। পিতার আবেদনে সাড়া দিয়ে দ্বিজবংশী দাশ ফুলেশ্বরী নদীর তীরে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দিরই আজও কালের সাক্ষী হয়ে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে।
মন্দিরের বিবরণ
কবি চন্দ্রাবতীর মন্দিরটি অষ্টভুজাকৃতির, যার উচ্চতা প্রায় ৩২ ফুট। মন্দিরের নিচতলায় একটি কক্ষ রয়েছে, যার ভেতরে সাতটি কুলুঙ্গি দেখা যায়। দ্বিতীয় তলায় পোড়ামাটির কারুকার্য সম্বলিত একটি প্রশস্ত কুলুঙ্গি রয়েছে। দ্বিতীয় তলা থেকে মন্দিরটি ধীরে ধীরে সরু হয়ে ৩২ ফুট উচ্চতায় শেষ হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯০ সালে মন্দিরের সংস্কার কাজ করে।
কবি চন্দ্রাবতী মন্দির কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনে
ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৭:১৫-তে এগারোসিন্দুর ট্রেনে উঠলে ১১টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছানো যায়। ট্রেনের টিকেটের মূল্য শ্রেণিভেদে ১৩৫ থেকে ৩৬৮ টাকা। কিশোরগঞ্জ শহরের কেন্দ্রস্থলে শহীদি মসজিদের সামনে ইজিবাইক ভাড়া মাত্র ১০ টাকা।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ বাসে
মহাখালী বা গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাস পাওয়া যায়। বাস ভাড়া ২৭০-৩৫০ টাকা। মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহন এবং গোলাপবাগ থেকে যাতায়াত পরিবহন বেশ জনপ্রিয়। শহরে পৌঁছে ইজিবাইক বা রিকশায় শহীদি মসজিদের সামনে আসা যায়।
কিশোরগঞ্জ থেকে মন্দিরে যাওয়ার উপায়
শহীদি মসজিদের সামনে থেকে নীলগঞ্জগামী ইজিবাইকে উঠে জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়ায় জালালপুর বাজার হয়ে চেয়ারম্যান বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে ডান দিকের রাস্তা ধরে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই মন্দিরে পৌঁছানো যাবে। চাইলে ইজিবাইক চালকদের একটু বেশি ভাড়া দিয়ে সরাসরি মন্দিরের কাছাকাছি নামতে পারবেন।
খাওয়ার ও থাকার ব্যবস্থা
মন্দিরের আশেপাশে খাবারের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কিশোরগঞ্জ শহরে ফিরে ধানসিঁড়ি, গাংচিল, দারুচিনি প্রভৃতি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পারবেন। শহরে থাকার জন্য রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা বা সরকারি ডাকবাংলো ভালো বিকল্প।
বিশেষ নির্দেশনা
বর্তমানে চন্দ্রাবতীর বাড়িতে একটি হিন্দু ও একটি মুসলিম পরিবার বসবাস করে। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে তাদের অনুমতি নিতে হবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!