নাটোরের কাঁচাগোল্লা

নাটোরের বিখ্যাত বনলতা সেনের মতোই নাটোরের কাঁচাগোল্লা একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। ভোজনরসিক বাঙালিরা ভুরিভোজ বা অতিথি আপ্যায়নের পর মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন। আর এই দিক থেকে নাটোরের কাঁচাগোল্লা (Natorer Kachagolla) আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। দেশের ১৭তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা। যদিও এই মিষ্টিটির নাম কাঁচাগোল্লা, এটি দেখতে মোটেও কাঁচা বা গোলাকার নয়। দুধের ছানা ও চিনি হলো কাঁচাগোল্লা তৈরির প্রধান উপাদান।

নাটোরের কাঁচাগোল্লার ইতিহাস

স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় এই মিষ্টান্নটির ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো। ধারণা করা হয়, ১৭৫৭ সালের পর থেকে কাঁচাগোল্লা জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৭৬০ সালে রানী ভবানীর রাজত্বকালে কাঁচাগোল্লার সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় জমিদারদের মিষ্টি মুখ করানোর জন্য নাটোরের কাঁচাগোল্লা ব্যবহৃত হতো। এমনকি সুদূর ইংল্যান্ডের রাজপরিবার এবং ভারতবর্ষেও কাঁচাগোল্লা নিয়ে যাওয়া হতো। রাজশাহী গেজেট ও কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা নিয়ে ফিচার প্রকাশিত হতো। কাঁচাগোল্লার স্বাদ রসগোল্লা, পানতোয়া এমনকি সন্দেশের স্বাদকেও ছাড়িয়ে যায়।

জনশ্রুতি আছে, রানী ভবানীর রাজত্বকালে নাটোরের লালবাজারের মধুসূদন পাল নামের এক মিষ্টি বিক্রেতা রানীকে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন। মিষ্টি বানানোর জন্য আগের দিন রাতেই ছানা তৈরি করে রাখা হতো। একদিন দোকানের কারিগর না আসায় আগের রাতে তৈরি করা দেড় থেকে দুই মন ছানা নিয়ে মধুসূদন চিন্তায় পড়ে যান। ছানাগুলো নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি কাঁচা ছানার মধ্যে চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখেন। পরে এই চিনি মিশানো ছানা খেয়ে তিনি চমৎকার স্বাদ পান। ভয়ে ভয়ে তিনি রানীর জন্য এই নতুন মিষ্টি নিয়ে যান। মিষ্টির স্বাদে রানীও মুগ্ধ হয়ে ধন্যবাদ জানান। এরপর নতুন এই মিষ্টির নামকরণ করা হয় কাঁচাগোল্লা।

কোথায় পাওয়া যায়?

নাটোর জেলার সর্বত্র কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায়। তবে নাটোরের কিছু উল্লেখযোগ্য দোকান ছাড়া কাঁচাগোল্লা না কেনাই ভালো। নাটোর শহরের কালীবাড়ি নামক আবাসিক এলাকার ভিতরের মন্দিরের সামনের জরাজীর্ণ দোকানটি নাটোরের সেরা কাঁচাগোল্লার দোকান হিসেবে পরিচিত। এছাড়া নীচা বাজারের কুণ্ডু মিষ্টান্ন ভান্ডার, অনুকূল দধি ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, ষ্টেশন বাজারের নয়ন ও সকাল সন্ধ্যা, বনলতা মিষ্টান্ন ভান্ডার, দাবপট্টি মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং ষ্টেশন বাজার রেলগেটের জগন্নাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকেও ভালো মানের কাঁচাগোল্লা কিনতে পারবেন। বর্তমানে কাঁচাগোল্লা বিক্রিতে মৌচাক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অতীতে প্রতি সের কাঁচাগোল্লার দাম ছিল ৩ আনা। তবে বর্তমানে এক কেজি নাটোরের কাঁচাগোল্লার দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে নাটোর সড়ক ও রেলপথে যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে হানিফ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীণ, তুহিন-এলিট পরিবহণে টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু-সিরাজগঞ্জ রুটে নাটোর যাওয়া যায়। বাসভেদে ভাড়া ৫৯০ থেকে ১৩০০ টাকা। রেলপথে ঢাকার কমলাপুর থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস নাটোরে যাওয়া যায়। ট্রেনে আসনভেদে ভাড়া লাগবে ৩৭৫ থেকে ১২৮৮ টাকা।

নাটোর সদর থেকে বাস বা অটোরিকশা নিয়ে লাল বাজার বা ষ্টেশন বাজারের ভিতরের দোকান থেকে নাটোরের আসল কাঁচাগোল্লার স্বাদ নিতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন?

নাটোরের মাদ্রাসা মোড় ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় হোটেল ভিআইপি, হোটেল মিল্লাত, হোটেল প্রিন্স, হোটেল রাজ, হোটেল রুখসানা ও নাটোর বোর্ডিং প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

নাটোর জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

নাটোরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চলনবিল জাদুঘর, চলনবিল, রানী ভবানীর রাজবাড়ী, শহীদ সাগর ও উত্তরা গণভবন অন্যতম।

নাটোরের কাঁচাগোল্লা এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
159.2 কিমি
নাটোর থেকে
1.67 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
রাণী ভবানী নাটোর রাজবাড়ী
রানী ভবানীর বাপের বাড়ি
উত্তরা গণভবন
পুঠিয়া রাজবাড়ী
হালতির বিল
শহীদ সাগর
রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ী
গ্রীন ভ্যালী পার্ক
চলন বিল
চলনবিল জাদুঘর
উৎসব পার্ক
বাঘা মসজিদ
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা
চাটমোহর শাহী মসজিদ
পাকশী রিসোর্ট
শিশু পার্ক
হার্ডিঞ্জ ব্রীজ
লালন শাহ সেতু
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন