পদ্মা নদীর বুকে, কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে অবস্থিত লালন শাহ সেতু। এটি কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলার মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। বিখ্যাত বাউল সাধক ফকির লালন সাঁই-এর নামানুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়। অনেকে একে পাকশী সেতু নামেও চেনেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ সড়ক সেতু হিসেবে পরিচিত লালন শাহ সেতু দুই লেন বিশিষ্ট এবং এর মোট প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০১ সালের ১৩ জানুয়ারি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় ২০০৮ সালের ১৮ মে। ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে রয়েছে ১৭টি স্প্যান, যেগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১০৯.৫ মিটার। প্রতিটি লেন পৃথক করা হয়েছে একটি মাঝখানের ডিভাইডারের মাধ্যমে, যা সেতুর সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে সেতুটি দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। একইসাথে পদ্মা নদীর ওপর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং বাতাসে ভেসে বেড়ানো ঢেউয়ের শব্দ এই স্থানটিকে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত করেছে। প্রতিদিন বহু ভ্রমণপিপাসু মানুষ আসেন এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় যেতে পারবেন বাস বা ট্রেন যেকোনো মাধ্যমেই। পদ্মা সেতু পেরিয়ে কল্যাণপুর থেকে নিউ এসবি সুপার ডিলাক্স, শ্যামলী বা হানিফ পরিবহনের মাধ্যমে সরাসরি কুষ্টিয়া পৌঁছানো যায়। নন-এসি বাসের ভাড়া প্রায় ৬০০-৭০০ টাকা, আর এসি বাসে যাত্রা করলে ভাড়া হতে পারে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।
ট্রেনযোগে যেতে চাইলে রয়েছে সুন্দরবন এক্সপ্রেস (সকাল ৮টা), মধুমতি এক্সপ্রেস (বিকেল ৩টা), এবং বেনাপোল এক্সপ্রেস (রাত ১১:৩০ মিনিট)। এই সব ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছাড়ে এবং গন্তব্যস্থল হবে কুষ্টিয়া কোর্ট রেলস্টেশন। ট্রেনের টিকিটের দাম আসন অনুযায়ী ৪১০ থেকে ৯৪৩ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কোর্ট স্টেশন থেকে ইজিবাইক বা রিকশা নিয়ে সেতু এলাকায় পৌঁছানো যায়।
অন্যদিকে, পাবনা থেকেও সহজেই লালন শাহ সেতুতে যাওয়া যায়। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেতুটি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পাশেই অবস্থিত। পাবনা সদর থেকে দাশুরিয়া মোড় হয়ে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই সেতু এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
কুষ্টিয়া শহরে থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। হোটেল রাতুল, হোটেল নূর, হোটেল লিবার্টি ও শাপলা হোটেল – এ ধরনের মধ্যম মানের হোটেলে সহজেই রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
সেতু এলাকায় ঘোরাঘুরির পথে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন বেশ কিছু মানসম্মত খাবারের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে পুনাক ফুড পার্ক, পিয়াজি ঘর, বিসমিল্লাহ কফি হাউজ, অবকাশ ক্যাফে, হোটেল লেক ভিউ ও সুন্দরী উল্লেখযোগ্য। কুষ্টিয়ায় গেলে অবশ্যই বিখ্যাত তিলের খাজা ও ঠান্ডা কুলফি খেয়ে দেখতে ভুলবেন না!
কুষ্টিয়ার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানসমূহ
লালন শাহ সেতু ছাড়াও কুষ্টিয়ায় আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে। যেমন – লালন শাহের মাজার, মীর মোশাররফ হোসেনের বাড়ি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও টেগর লজ ইত্যাদি।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!